উদ্ভিদ

সাগর নিশিন্দা

সাগর নিশিন্দা
সাগর নিশিন্দা

দুপুরের হালকা রোদে হেঁটে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে গেস্টহাউসে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ি। অল্প কয়টা দিনের জন্য এখানে আসা। কিন্তু পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে হবে। আসলে এখানকার সুন্দর আবহাওয়া ও সাগরের নীল জলের ঢেউয়ের আবেদন আপনাকে ঘরে আটকে রাখতে পারবে না। মনে হবে সাগর যেন সেই কত কালের প্রেমিকা!
এ দ্বীপের বৃক্ষশ্রেণির গাছপালার মধ্যে নারকেলই প্রধান। তা ছাড়া কেয়া, সুপারি, গরান, বাইন, বল্লা, শজনে, গামারি, সাগরকলমি, দুধ কলমিলতা, শিরীষ, বক ফুল, কেয়া, শিমুল, কাঠবাদাম, করচ, মেঘ শিরীষ, জংলি বাদামও দেখেছি। বন্য প্রজাতি ছাড়াও মানুষ কক্সবাজার থেকে এই দ্বীপে দারু উৎপন্নকারী গাছপালার সমাহার ঘটিয়েছেন। আবার যেসব ফলের বীজ জলে ভাসে এবং অনেক দিন জলে থেকেও নষ্ট হয় না, সেসব গাছেরও সমাবেশ ঘটেছে এ দ্বীপে। দূরদূরান্ত থেকে ভেসে আসা বীজ শিকড় গজিয়ে এ দ্বীপকে বুকে টেনে নিয়েছে।
এ দ্বীপের একটি বড় সম্পদ হলো সামুদ্রিক শৈবালজাতীয় উদ্ভিদ; যার অনেক প্রজাতি মুক্ত ভাসমান এবং অনেক প্রজাতি প্রবালের গায়ে জন্মে। দ্বীপের পূর্ব ও উত্তরের প্রবাল অংশে অল্প জলা থাকা অবস্থায় হাঁটলে অনেক শৈবাল দেখা যায়। এসব শৈবালের নানান রং। এ দ্বীপের কাঁকড়াসহ সামুদ্রিক মাছ ও শৈবাল অনেকেরই প্রিয় খাবার। শৈবালসহ অনেক বুনো গাছপালার পাশাপাশি সাগরদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে গিয়ে দেখা হয়েছিল নীল রঙের সাগর নিশিন্দা ফুলের সঙ্গে। লাইটহাউস গেস্টহাউস থেকে বাজারের দিকে আসতে পূর্ব দিকে সৈকতের কাছাকাছি কেয়ার ঝোপের কাছে কয়েকটি গাছে ফুল ও ফল ধরেছিল। সাগর নিশিন্দা নামটি দিয়েছিলেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও নিসর্গী ড. নওয়াজেশ আহমেদ। সাগরপাড়েই এ গাছের আবাস, সে জন্য নামটা মোটেই বেমানান নয়।
সাগরের নুড়ি-বালুকাময় এলাকায় ভালো জন্মে সাগর নিশিন্দা। যেখানে জল জমে থাকে না, সে জায়গা এটি বৃদ্ধির জন্য উপযোগী। সাধারণত বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বেলাভূমিঘেঁষা স্থান, বিশেষত কক্সবাজারের উপকূলে সাগর নিশিন্দা বেশি দেখা যায়। উত্তর অস্ট্রেলিয়া, তাহিতি দ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, ভারত ও শ্রীলঙ্কার উপকূল থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে। সাগর নিশিন্দা গুল্ম বা ছোট বৃক্ষজাতীয় মাঝারি গড়নের চিরসবুজ উদ্ভিদ। এ গাছের কাণ্ড সুগন্ধি। উদ্ভিদ প্রায় আট মিটার লম্বা হয়। বাকল ছাই ধূসর ও মসৃণ। কাণ্ডে শাখা-প্রশাখা কম থাকে। পাতা সরল। পাতার রং কালচে সবুজ। প্রতিটি শাখার আগায় বেড়ে ওঠা লম্বা মঞ্জরিতে মার্চ মাসে বেগুনি নীল ফুল ফোটে। ফল গোলাকার, পাকলে কালো হয়। এ উদ্ভিদ ভেষজ গুণসম্পন্ন। এর ফুলের পাপড়ি মধুতে মিশিয়ে খেলে জ্বর ও বমি কমে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূলীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন এর সেদ্ধ পাতা ও নরম কাণ্ডের পেস্ট ব্যবহার করে আঘাত পাওয়া স্থানে। বীজ ও কাণ্ড কাটিংয়ের মাধ্যমে সাগর নিশিন্দার বংশবৃদ্ধি ঘটে। এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Vitex trifolia, পরিবার Verbenaceae, ইংরেজি নাম Simpleleaf Chastertree।