রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুটেছে উদাল
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুটেছে উদাল

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়: ফুটেছে দুর্লভ যত ফুল

৭৫ একরের ক্যাম্পাস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিচিত্র গাছে আচ্ছাদিত। যে কটি ভবন আছে, সেগুলো গাছশোভিত। এসব গাছে ফোটে হরেক রঙের ফুল। এ বসন্তেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সচরাচর দেখা যায় না এমন কয়েকটি ফুলের আলাপ করা যাক।

বিচিত্র ফুলের মধ্যে অন্যতম সমুদ্রজবা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সড়কের পাশে গাছটির অবস্থান। এ গাছের পাতা সবুজ নয়, কিছুটা খয়েরি। বছরখানেক ধরে গাছটিতে ফুল ফুটছে। প্রায় সারা বছর ফুল থাকে। বর্ষায় বৃষ্টিতে ধুয়ে খয়েরি রঙের পাতা চিকচিক করে। গাছটি ঝোপালো আকৃতির।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্লভ প্রজাতির গাছের মধ্যে মাধবীলতা একটি। ২০২১ সালে এই চারা রোপণ করা হয়। ২০২৪ সালে প্রথম ফুল এসেছিল। গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও অনেক বেশি ফুটেছে। মাধবীলতা আজকাল বেশ দুর্লভ হয় উঠেছে।

মণিমালা

উদালগাছের বয়স বছর তিনেক। এ বছর প্রথম ফুল এসেছে। উদালগাছে ফাল্গুন মাসে ফুল আসে। যখন ফুল আসে, তখন গাছের সব পাতা ঝরে যায়। কেবল ডালগুলো থাকে। ওই ডালেই ফোটে ফুল। হলুদ বরণ ফুল দেখতে বেশ বাহারি।

ক্যাম্পাসে হাতিবেল নামে একটি গাছ আছে। বয়স তিন-চার বছর। ছোট ছোট অনেক ফলের মতো হলেও সেগুলো ফল নয়, কুঁড়ি। কুঁড়ি থেকে ফুল বেরোচ্ছে। এ গাছের ফল থেকে ডুগডুগি তৈরি করা হয়। বেলের মতো হলেও এ ফলের আকৃতি অনেক বড়। তাই এর নাম হাতিবেল।

ডম্বিয়া নামে একটি ফুল ফুটছে। অনেকগুলো ফুল একসঙ্গে থোকায় থোকায় ফোটে। গোলাপি রঙের এ ফুল দেখতে অনেকেই আসেন।

গ্লিরিসিডিয়া নামের কয়েকটি চারা রোপণ করা হয় বছর চারেক আগে। এ গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। ডালগুলো নিচ থেকে এমনভাবে গগনমুখী হয়েছে যে ফুল আসার পর গোটা গাছকে একটি ফুল মনে হচ্ছে। এ ফুলকে বাংলায় বসন্তমঞ্জরী এবং ফাল্গুনমঞ্জরীও বলা হয়ে থাকে।

বসন্তমঞ্জরী

‘ছদ্মশিমুল’গাছে প্রথমবারের মতো ফুল এসেছে। গাছটিতে একটি পাতাও নেই। রাতে ফুলটি ফোটে। দেখতে কিছুটা বান্দরহুলা ফুলের মতো। তবে বান্দরহুলার মতো তীব্র গন্ধ ছড়ায় না। বান্দরহুলা ফুলও এবার অনেক ফুটেছে।

চায়না ডল নামের আরেকটি গাছ আছে ক্যাম্পাসে। গাছটি যে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। সচরাচর যেমন দেখি এ গাছ তার থেকে কিছুটা ভিন্ন। ঝোপালো হলেও অন্য গাছের মতো ঝোপালো নয়। কয়েক দিন আগে দেখি এই গাছেও ফুল এসেছে।

ডম্বিয়া

নহিচিচা বা লাল উদাল নামে অনেকগুলো গাছ আছে ক্যাম্পাসে। এই গাছেও এ বছর ফুল আসতে শুরু করেছে। খৈ-বাবলা বা জিলাপিগাছ ফুলে ভরে আছে। বক্সবাদামগাছেও এ বছর ফুল এসেছে। মণিমালাগাছ ভরে গেছে ফুলে। খুব সুন্দর ফুল। কনকচাঁপাগাছে হাজার হাজার কুঁড়ি এসেছে। এরই মধ্যে কিছু ফুটতেও শুরু করেছে। অশোকগাছ আছে কয়েকটি। কী সুন্দর অশোকও ফুটেছে। নীলমণিলতাও ফুটেছে দারুণ! কাঁঠালচাঁপা ফুটেছে। এ গাছ বেশ ঝোপালো হয়েছে। সোনাপাতিগাছ ভরে আছে হলুদ রঙের থোকা থোকা ফুলে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক ফুল ফোটার অপেক্ষায় আছে। পালাম, কুরচি, নাগলিঙ্গম, মহুয়া, সুলতানচাঁপা, কইনার, বনআসরা, স্বর্ণচাঁপার ফুলও হয়তো শিগগিরই দেখা যাবে। বাংলাদেশের বিরল সব প্রজাতির বৃক্ষের উদ্যান হয়ে উঠুক এই ক্যাম্পাস।

  • লেখক, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর