আজ সোমবার বিশ্বের ১২৫ দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। আজ সকাল পৌনে ৯টার দিকে আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুমান ১৫২। এ মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয়। আজ বায়ুদূষণে শীর্ষ স্থানে আছে উগান্ডার কাম্পালা, স্কোর ১৫৯। দ্বিতীয় স্থানে আছে চিলির সান্তিয়াগো।
বর্ষাকালে সাধারণত বায়ুদূষণ কম থাকে। মোটামুটি মে মাসের শেষ থেকেই কমে আসতে থাকে দূষণ। কারণ, এ সময়ের বৃষ্টি। প্রাকৃতিক এ ঘটনা ছাড়া দূষণ রোধে আর কোনো ব্যবস্থাই আসলে নেই। সরকারি নানা উদ্যোগ তো ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। বৃষ্টি হলে নগরীর দূষণ কমে কয়েক দিন, তারপর আবার বাড়ে। জুলাই সবচেয়ে কম দূষণের মাস। তারপরও আজ দূষণ পরিস্থিতি অনেক খারাপ।
বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এ লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। আজ ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ১২ গুণের বেশি।
বায়ুদূষণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের সবচেয়ে কম দূষণ থাকে জুলাই মাসে। এ মাসে গড়ে দূষণ ৩০ মাইক্রোগ্রামের নিচে থাকে, কিন্তু এখন তা ৪০–এর ওপরে আছে। এখন আমরা রাতের বেলা দূষণের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করছি।’
জুন ও জুলাইয়ে মাঝেমধ্যে দূষণ অনেক কমে আসে, কিন্তু তাতে কারও কোনো কৃতিত্ব আসলে যে নেই, আজকের দূষণ সে বাস্তবতাকেই তুলে ধরছে।
মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিংয়ে আজ বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। আইকিউএয়ারের মানসূচকে সেখানকার গড় বায়ুমান ১৮১। এরপর আছে পীরেরবাগ রেললাইন ও গোরান।
আজ আইকিউএয়ারের দেওয়া সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে পরামর্শ, বাইরে বের হলে নগরবাসীকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে আছে কলকারখানা ও যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো। দূষণ রোধে হাঁকডাক ও নানা ধরনের প্রকল্পও কম হয়নি সরকারি স্তরে, কিন্তু দূষণ কমছে না।
দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চ মাসেও দূষণ পরিস্থিতি ছিল মারাত্মক।
ঢাকার আজকের দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার আজ প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি সাধারণত বাতাসের ধূলিকণা ও গ্যাসীয় দূষণ কিছুটা ধুয়ে ফেলে। কিন্তু যখন দূষণের উৎস, যেমন যানবাহনের কালো ধোঁয়া, নির্মাণকাজ, ইটভাটা ও শিল্পকারখানার নির্গমন চলতেই থাকে, তখন বৃষ্টিও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে না।