ইনমা সম্মেলনে আর্ল জে উইলকিনসন
ইনমা সম্মেলনে আর্ল জে উইলকিনসন

সাংবাদিকেরা ক্ষমতাবানদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারছে: ইনমা সিইও

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সংগঠন ইনমার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর্ল জে উইলকিনসন বলেছেন, সাংবাদিকেরা এখন সময়ের দাবি মেটাতে প্রস্তুত এবং তাঁরা ক্ষমতাবানদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারছেন। ইনমা ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব নিউজ মিডিয়া-২০২৫-এর এই উদ্বোধনী দিনে আর্ল জে উইলকিনসন এ কথা বলেন।

গত বুধবার নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (ইনমা) ৮৫তম এই বার্ষিক বিশ্ব সম্মেলন। বাংলাদেশ থেকে এবারের এই বিশ্ব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের প্রতিনিধিরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে থাকা বড় পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সংবাদমাধ্যম

আর্ল জে উইলকিনসন শুরুতেই খোলাখুলি আলোচনা শুরু করেন ট্রাম্প প্রশাসনের সংবাদমাধ্যমবিরোধী আক্রমণ প্রসঙ্গে। উইলকিনসন বলেন, ‘আমরা বরং ঘরের হাতিটাকে সরাসরি মোকাবিলা করি, আর আমি মনে করি, আমরা সবাই জানি সেই হাতি কে।’ এরপর তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে আপনি যা খুশি বলুন, কিন্তু তিনিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংবাদ। তিনি আমেরিকান গণতন্ত্রের রক্ষাকবচগুলোকে পরীক্ষা করছেন। তিনি সমাজের স্তম্ভগুলো আক্রমণ করছেন এবং সেগুলোকে নিজের ইচ্ছেমতো পাল্টে দিচ্ছেন।’

ইনমা সম্মেলনে আর্ল জে উইলকিনসন

তবে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আশাবাদী আর্ল জে উইলকিনসন। তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা এখন এই সময়ের দাবি মেটাতে প্রস্তুত এবং তাঁরা ক্ষমতাবানদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোতে নতুন করে দায়িত্ববোধ ফিরে এসেছে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সংখ্যা বাড়ছে, সত্য যাচাইয়ের উদ্যোগও প্রসারিত হচ্ছে।’

উইলকিনসন স্বীকার করেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ সংবাদমাধ্যমশিল্পের ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছে। বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কতটা সহযোগিতা করা হবে কিংবা সরকার হস্তক্ষেপ করলে তা থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে—এসব বিষয় এখন গুরুত্বসহকারে ভাবতে হচ্ছে।

ব্যবসায়িক মডেল বদলে যাচ্ছে

বর্তমান সংকটের মধ্যে সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। উইলকিনসন বলেন, আমেরিকার অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে দুর্বল, ঋণে ডুবে আছে। কিন্তু ইউরোপের সংবাদমাধ্যমগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো অবস্থায় আছে। উত্তর আমেরিকার অনেক প্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত মূলধন নেই, বিপরীতে ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠান এই সমস্যায় নেই।

এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—পাঠকের সঙ্গে নতুনভাবে ব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে সাবস্ক্রিপশন বা সদস্যদের ধরে রাখা যায়।

উইলকিনসন বলেন, ‘আগে আমরা শুধু বেশিসংখ্যক পাঠকের পেছনে ছুটতাম। এখন পরিচিত, সরাসরি যুক্ত ও সক্রিয় পাঠকের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’ তবে একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, এখন অনেক পাঠক লিংকে ক্লিক না করেই কনটেন্ট দেখে নিচ্ছেন, ফলে পাঠকের অভ্যাসও বদলে যাচ্ছে। তাই ব্যবসার ধরন বদলাতে হবে পাঠকের এই নতুন আচরণ বুঝে।

‘গণতন্ত্র শুধু অন্ধকারে নয়, নীরবতায়ও মারা যায়। যখন সাংবাদিকেরা সত্য বলা বন্ধ করে দেন, তখনই সমাজ দুর্বল হয়ে পড়ে।’
আর্ল জে উইলকিনসন, নির্বাহী পরিচালক, ইনমা

ব্র্যান্ডের নতুন যাত্রা

বর্তমানের পাঠকের মন জয় করতে হলে সংবাদমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে নিজেদের ব্র্যান্ডকে নতুনভাবে গড়ে তোলা। আর্ল জে উইলকিনসন বলেন, ‘আমরা দেখি, সব দিক থেকেই ব্র্যান্ডের নতুন করে জন্ম হচ্ছে। তবে অনেক সময় আমাদের ব্র্যান্ডে আবেগ বা আলাদা কোনো পরিচয় থাকে না। আমরা শুধু পুরোনো গৌরব নিয়েই পড়ে থাকি।’

আর্ল জে উইলকিনসন, সংবাদমাধ্যমের উচিত তাদের ব্র্যান্ডকে এমন একটি বিষয়, যেমন আবেগ, মূল্যবোধ বা কোনো থিম ঘিরে গড়ে তোলা, এবং সেটা সব মাধ্যমে—প্রিন্ট বা ডিজিটাল—পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি চাইলে আপনার ব্র্যান্ড মজার হতে পারে, স্মৃতিকাতর হতে পারে বা দেশপ্রেমে ভরা হতে পারে।’
আর্ল জে উইলকিনসন সতর্ক করে বলেন, ‘ট্রাম্প পুরো মিডিয়াজগৎকে নাড়িয়ে দিয়েছেন, কিন্তু শুধু তাঁকে ঘিরেই পুরো ব্র্যান্ড গড়ে তোলা ঠিক নয়। মনে রাখবেন, তিনি হয়তো চার বছর পর থাকবেন না। সুতরাং কৌশল তৈরি করতে হয় এমন বিষয় নিয়ে, যা দীর্ঘস্থায়ী—সাময়িক উত্তেজনার ওপর নয়।’

বক্তব্যের একদম শেষে উইলকিনসন বলেন, ‘গণতন্ত্র শুধু অন্ধকারে নয়, নীরবতায়ও মারা যায়। যখন সাংবাদিকেরা সত্য বলা বন্ধ করে দেন, তখনই সমাজ দুর্বল হয়ে পড়ে।’