‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে)
‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে)

দেশেই ক্যানসার চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা

পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি

বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ ক্যানসার হলো ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যানসার। যার প্রধান কারণ হিসেবে বর্তমান জীবনযাত্রাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৮৭ জন নারীর মধ্যে একজনের ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। ধারণা করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে এর হার ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এই ক্যানসারে বেঁচে থাকার হার ৮৮ শতাংশ।

সবার মধ্যে ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে এসকেএফ অনকোলোজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। সেখানে এসব কথা উঠে আসে। এটি গত মঙ্গলবার (২০ মে) প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন আহছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) ডা. কুদরত-ই-ইলাহী। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘ডিম্বাশয়ের ক্যানসার’। বাংলাদেশে ডিম্বাশয় ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, ডায়াগনোসিস, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, সচেতনতা ও প্রতিরোধব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. কুদরত-ই-ইলাহী।

ডিম্বাশয় ক্যানসার আসলে কী? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. কুদরত-ই-ইলাহী বলেন, ‘সাধারণত নারীদের তলপেটের দুই পাশে যে ওভারি বা ডিম্বাশয় থাকে, সেখানে যখন কোনো ক্যানসার হয়, তখন সেটাকে বলে ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যানসার।’

ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি সম্পর্কে ডা. কুদরত-ই-ইলাহী বলেন, ‘পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদেরই মূলত এই ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া যেসব নারীর তাড়াতাড়ি মাসিক হয় বা স্থায়ীভাবে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, যাঁদের পরিবারে মা, খালা, ফুফু অর্থাৎ নিকটাত্মীয়দের কারও যদি এ ধরনের রোগ থাকে তাহলে তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। পাশাপাশি জরায়ু ও কোলন ক্যানসারের সঙ্গেও এর সম্পর্ক থাকতে পারে।’

ওভারিয়ান ক্যানসারের উপসর্গগুলো কী কী? এ প্রসঙ্গে ডা. কুদরত-ই-ইলাহী বলেন, তলপেট বা পেট ফুলে যাওয়া, পেটে অস্বস্তি লাগা, মাসিকের সমস্যা হওয়া বা একধরনের ক্লান্তি বোধ করা, কোমর বা পিঠে ব্যথা করা, অরুচি, রুচিমন্দা, গ্যাস হওয়া ইত্যাদি বিষয় মূলত এই ক্যানসারের উপসর্গ।

জরায়ুমুখে ক্যানসার আর ডিম্বাশয় ক্যানসারকে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। তাঁদের উদ্দেশে ডা. কুদরত-ই-ইলাহী বলেন, গর্ভধারণ করার পরে যেখানে সন্তান থাকে, সেটাকে বলা হয় জরায়ু। আর জরায়ুর ফান্ডাস, বডি ও মুখ আছে। এই মুখে যখন কোনো ফান্ডাস হয়, সেটা জরায়ুমুখের ক্যানসার। আর ডিম্বাশয় কিন্তু জরায়ুর দুই পাশে থাকে দুইটা হাতের মতো, যাকে বলে ‘ফ্যালোপিয়ান টিউব’। এর শেষ প্রান্তে তলপেটে পেলভিক রিজিয়নে দুটি ডিম্বাশয় থাকে। যাকে আমরা ওভারি বলি। কাজেই জরায়ুমুখের ক্যানসার আর ডিম্বাশয়ের ক্যানসার সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বাংলাদেশে ডিম্বাশয় ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, ডায়াগনোসিস, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, সচেতনতা ও প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. কুদরত-ই-ইলাহী

ওভারিয়ান ক্যানসারের স্ক্রিনিং পদ্ধতি কী কী হতে পারে? জানতে চাওয়া হলে ডা. কুদরত-ই-ইলাহী বলেন, মূলত ক্যানসারের জগতে স্ক্রিনিংয়ের যে বিষয় বা রোগগুলো আছে, ওভারিয়ান ক্যানসার সরাসরি তার ভেতরে আসে না। যেমন স্তন ক্যানসারের একটা স্ট্রাকচার স্ক্রিনিংয়ের রূপরেখা আছে। কিন্তু ওভারিয়ান ক্যানসারে এ রকম কিছু নেই। মিনিমাল একটা আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যায়। তবে যাঁদের ওভারিয়ান ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাঁরা ক্যানসার মার্কার সি-১২৫ করতে পারেন। এর রিপোর্ট পেলেই বোঝা যায়, এ ধরনের ক্যানসার আছে কি নেই। তবে এখানে একটু বলে রাখতে চাই, ‘সি-১২৫’ বেশি আছে মানেই যে এটা ওভারিয়ান ক্যানসার, এমন ভাবার কারণ নেই।

ওভারিয়ান ক্যানসার কি ভিন্ন টাইপের রয়েছে? উপস্থাপক জানতে চাইলে ডা. কুদরত-ই-ইলাহী বলেন, সব ক্যানসারেরই টাইপ রয়েছে। আর বর্তমান আধুনিক যুগে টাইপসগুলো মূলত মলিকুলার হয়ে যাচ্ছে। ওভারিয়ান ক্যানসার মূলত তিন ধরনের—এপিথিলিয়াল, জাম সেল ও স্টমাল।

প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে।

ওভারিয়ান ক্যানসার মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিদ্যমান চিকিৎসাব্যবস্থা কতটা বিশ্বমানের? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. কুদরত-ই-ইলাহী বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বমানের চিকিৎসা দিতে সক্ষম, তবে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ, আমাদের চিকিৎসাসেবাটা রুট লেভেল পর্যায় পর্যন্ত এখনো পৌঁছায়নি। তবে বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা করার মতো যে সেন্টার রয়েছে, সেগুলো মানসম্পন্ন। তাই বলতে পারি, ক্যানসারের বিশ্বমানের চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব, কিন্তু সেটি সবার জন্য এখনো সহজলভ্য হয়নি।