১০ সেপ্টেম্বর মেলবোর্নে ‘কালারস অফ বাংলাদেশ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রফিকুন নবী। উপস্থিত ছিলেন প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীরাও
১০ সেপ্টেম্বর মেলবোর্নে ‘কালারস অফ বাংলাদেশ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রফিকুন নবী। উপস্থিত ছিলেন প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীরাও

মেলবোর্নে প্রদর্শনী

রংতুলিতে আঁকা হয়েছে এক টুকরো বাংলাদেশ

যেন রংতুলিতে লেখা হয়েছে সমকালীন বাংলাদেশের কথা। রাজপথের রাজনীতির পাশাপাশি এ দেশের প্রকৃতির নন্দনতত্ত্বের গল্প উঠে এসেছে শিল্পীদের ছবিতে। আঁকা হয়েছে জুলাই গণহত্যার দৃশ্য। আছে জাল নিয়ে মাঝিদের অপেক্ষার চিত্রও।

১১ জন শিল্পীর মোট ৬০টি শিল্পকর্ম নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী ‘কালারস অব বাংলাদেশ’। টোকাইয়ের ছবি থেকে এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে গ্রামবাংলার নারীর প্রতিকৃতি। অ্যাক্রিলিক, জলরং, তৈলচিত্র মাধ্যমে ছবিগুলো এঁকেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীরা। একই সঙ্গে স্থান পেয়েছে তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের আঁকা ছবিও।

মেলবোর্নের ব্রুন্সউইক স্ট্রিট-এ অবস্থিত ‘সোল’ গ্যালারিতে ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এ প্রদর্শনী। ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।

অনুষ্ঠানে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে যেন বিদেশের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। এই আয়োজনে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। এমন আয়োজন সব সময়ই বাংলাদেশের শিল্পচর্চাকে উদ্বুদ্ধ করে বলে উল্লেখ করেন রফিকুন নবী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন মেলবোর্নের প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীর দল। এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরাও।

প্রদর্শনীটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ‘অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টস’। প্রদর্শনী নিয়ে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের চেয়ারপারসন নীলু রওশন মুর্শেদ বলেন, বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের মাধ্যমে দেশের শিল্প ও সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রসারের জন্য এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

‘কালারস অফ বাংলাদেশ’ প্রদর্শনীতে ছবির সঙ্গে আছে ভাস্কর্য। উঠে এসেছে সমকালীন গল্প

মুনতাসির আহসানের কিউরেশনে আয়োজিত প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বরেণ্য শিল্পী মনিরুল ইসলামের ‘জেনোসাইড অব জুলাই ইন ঢাকা’সহ নয়টি ছবি। সেখানে মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ‘ইভিনিং সং’–এর মতো রয়েছে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আঁকা ‘ফ্রম নাথিং’–এর মতো অনেক বিস্তৃত পরিসরের শান্ত স্বরের ছবি।

শিল্পী রফিকুন নবীর ‘স্টোরি অব রিভার’, ‘আ সানি ডে’র সঙ্গে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে সেই জনপ্রিয় বিখ্যাত ‘টোকাই’। টোকাইয়ের ছবি রয়েছে মোট ৩টি। কখনো সে কাককে বাঁশি শোনাচ্ছে, কখনো টাকু মাথার টোকাই ঘুমিয়ে আছে পথের পাশে।

শিল্পী ফরিদা জামানের ‘হান্টার’, ‘ফিশিং নেট’ বা ‘সোফিয়া’র মতো পাঁচটি ছবিই আঁকা হয়েছে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে। এখানে আছে পরাবাস্তবতার অনুভব। শিল্পী মুহম্মদ ইউনুসের ‘হেরিটেজ’, ‘সিম্ফনি’সহ পাঁচটি ছবিই তৈলচিত্র। এই ছবিগুলোতে যেন শিল্পী তাঁর রংতুলিকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। শিল্পী নিজের আনন্দের জন্যই আঁকেন, সেই সত্যটি আবারও সত্য হয়ে ধরা দেয় দর্শকের কাছে এসব ছবিতে।

শিল্পী জামাল আহমেদের অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আঁকা ‘রিটার্নিং হোম’ ছবিটি প্রথম দেখাতেই দর্শকের দৃষ্টি আটকে রাখবে। পোষা প্রাণীটি নিয়ে ঘরে ফেরা নারীর ছবিটিতে গ্রামবাংলার এক টুকরো গল্প লেখা হয়েছে। এই শিল্পীর আরেকটি ছবির নাম ‘লেডি ওয়াকিং থ্রু রিভার’। শিল্পীর মোট ৫টি ছবি স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে।

শিল্পী কনকচাঁপা চাকমার ‘পোয়েমস অব নেচার’ বা ‘দ্য কালার অব লাভ’ ছবিতে উঠে এসেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসবের আনন্দ। কালারস অব বাংলাদেশ প্রদর্শনীতে আছে এই শিল্পীর মোট ছয়টি ছবি। আছে তরুণ শিল্পী নাজমুল হকের ‘সাইলেন্স অব নেচার’, পূর্ণিয়া মৃত্তিকার ‘লাইফ—নো পাথ বাট ফরোয়ার্ড’ ছবি।

প্রদর্শনী ঘুরে দেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অস্ট্রেলিয়ার দর্শকেরাও। এতে স্থান পেয়েছে ৬০ টি শিল্পকর্ম

এখানে আছে সিগমা হকের অ্যালুমিনিয়ামের ওপর করা ‘সোলমেট’ বা ‘গসিপিং’–এর মতো জীবনঘনিষ্ঠ ভাস্কর্য শিল্পও । আরও আছে শিল্পী নূর মুনজেরিনের মাইগ্রেশন, ব্লকেজের মতো সমকালীন বাস্তবতা নিয়ে রূপকধর্মী চিত্র। আজমির হোসেন এঁকেছেন মুনসুন, প্লেগ্রাউন্ডের মতো নৈসর্গিক ছবিগুলো।

প্রদর্শনী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এক দিনব্যাপী চিত্র কর্মশালা ও আর্ট টক। এতে প্রদর্শনীতে আসা সব শিক্ষার্থী, বিদেশি শিল্পী এবং দর্শক বাংলাদেশি শিল্পচর্চা সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ এবং মতামত প্রকাশের সুযোগ পাবেন।

মেলবোর্নের ব্রুন্সউইক স্ট্রিট-এ অবস্থিত ‘সোল’ গ্যালারিতে প্রতিদিন স্থানীয় সময় বেলা ১১টা থেকে প্রদর্শনী চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনী ‘কালারস অব বাংলাদেশ’ চলবে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।