
পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘পদত্যাগ করলে এখানে বসতাম না।’
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা প্রশ্নে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আজকের সভায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর অগ্রগতি পর্যালোচনা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি, জুলাইয়ের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই পত্রিকা দুটির সম্পাদকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম খান কোথায় আছেন, এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসামি কোথায় আছে, জানলে ধরে ফেলতাম। দেশেও থাকতে পারে, বাইরেও থাকতে পারে। আসামি বৈধভাবে বাইরে যায়নি। অবৈধভাবে গেছে কি না, এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তাঁর মন্ত্রণালয়সহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে যৌথ বাহিনী (পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি) গ্রেপ্তার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ঘাটনসহ গোপনীয়তার স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাঁরা আশ্বস্ত করছেন, এ বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। মূল হোতাকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দালাল চক্র ফিলিপের সহযোগী পাঁচজনকে আটক করে বিজিবি। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তারা তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ময়মনসিংহে পোশাকশ্রমিককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটিকে (অভিযান) আরও জোরদার, বেগবান করাসহ ফ্যাসিস্ট টেররিস্ট দমনের উদ্দেশ্যে ১৩ ডিসেম্বর অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ অভিযানে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ৫৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৩৭টি গুলি, ১৩৭টি কার্তুজ, ৬২টি দেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়। এ ছাড়া উদ্ধার হয় গ্রেনেড, মর্টারের গোলা, গানপাউডার, আতশবাজি, বোমা তৈরির উপকরণ। এ সময় মামলা ও পরোয়ানাভুক্ত ৬ হাজার ৯০৭ জনসহ মোট ১৩ হাজার ৫০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর অংশ হিসেবে ২ হাজার চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে।
বড়দিন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসব যাতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো প্রকার আতশবাজি করা যাবে না। রাস্তা অবরোধ বা ব্লকেড করে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। প্রতিটি গির্জার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গুলশান, বনানীসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীতে যাতে ট্রাফিক স্বাভাবিক থাকে, সে বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ ছাড়া এ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নগরীতে টহল ও তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (জকসু) নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, একইভাবে জকসু নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরাপদ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।
সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের আরও বেশি হারে গ্রেপ্তার করা। গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো ও নিবিড় করা। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই স্থাপনার নিরাপত্তায় বিশেষায়িত বাহিনী স্ট্যান্ডবাই রাখা। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম বাড়ানো। পুলিশ সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তা নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা। নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা।
নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের প্রশিক্ষণ তিন ভাগের দুই ভাগ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।