আদালতের হাজতখানা থেকে বের করে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে প্রিজন ভ্যানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে
আদালতের হাজতখানা থেকে বের করে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে প্রিজন ভ্যানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে

আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামের একবেলা

পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের রাখার জন্য হাজতখানায় তিনটি বড় আকারের কক্ষ রয়েছে। কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত চত্বরে আনার পর আসামিদের রাখা হয় ওই হাজতখানায়।

হাজতখানার ভেতর আসামিদের বসার জন্য রয়েছে মাদুর। আসামিরা মাদুরে বসে থাকেন। যখন আদালত থেকে আসামিদের এজলাসকক্ষে তোলার নির্দেশনা আসে, তখন হাজতখানার পুলিশ সেই আসামিকে আদালতে তুলে থাকেন।

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল আজ মঙ্গলবার। একই সঙ্গে সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরীকেও দুর্নীতির মামলায় হাজির করার দিন ধার্য ছিল।

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৯টা। একটি প্রিজন ভ্যান এসে থামে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে। প্রিজন ভ্যানের ভেতরে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। হাজতখানার পুলিশ সদস্যরা কামরুল ইসলাম ও এস কে সুর চৌধুরীর দুই হাতেই হাতকড়া পরিয়ে দেন। পরে তাঁদের প্রিজন ভ্যানের সামনে থেকে হাঁটিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হাজতখানায় রাখা হয় এই দুই আসামিকে। সেখানে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবিস্তার জানা যায় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে।

তখন সকাল ৯টা ১৫ মিনিট। হাজতখানার ভেতর মেঝেতে মাদুর বিছানো। সেখানে বসে পড়েন কামরুল ইসলাম ও এস কে সুর চৌধুরী। বেলা ২টা পর্যন্ত ওই মাদুরে বসে ছিলেন তাঁরা।

সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে

একই হাজতখানায় অন্য সাধারণ কয়েদিরাও কামরুল ইসলামদের সঙ্গে ওই কক্ষে অবস্থান করেন। দুপুর ১২টার পর কামরুল ইসলাম হাজতখানার পুলিশ সদস্যদের ডাকেন। কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আদালতের নির্দেশ না পেলে তাঁরা কোনোভাবেই হাজতখানা থেকে কারাগারে নিয়ে যেতে পারবেন না। এ সময় হাঁটু গেড়ে চুপ করে হাজতখানায় বসে থাকেন কামরুল।

বেলা ১টার পর কামরুল ইসলাম আরও ক্ষুব্ধ হন। হাজতখানার ওই কক্ষের ভেতর পায়চারি করতে থাকেন তিনি। বারবার পুলিশ সদস্যদের তাগাদা দিতে থাকেন, যেন তাঁকে দ্রুত হাজতখানা থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে বেলা ২টার দিকে হাজতখানার ভেতর থেকে প্রথমে কামরুল ইসলামকে বের করে আনা হয়। এরপর বের করা হয় এস কে সুরকে। তবে তাঁদের কাউকে আদালতে সশরীর হাজির করা হয়নি। মামলার পরবর্তী দিন রেখে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

প্রিজন ভ্যানের মধ্যে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে

দুজনকে যখন হাজতখানা থেকে বের করা হয়, সে সময় দেখা যায়, কামরুল ইসলামের দুই হাতে হাতকড়া। মাথায় পুলিশের হেলমেট। বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। হাজতখানার সামনে থেকে বের হওয়ার পরপরই তিনি হোঁচট খান। তখন পুলিশের এক সদস্য তাঁর দুই হাত ধরে বলতে থাকেন, ‘আস্তে... আস্তে’।

এ সময় আরও ক্ষুব্ধ হন কামরুল ইসলাম। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হেলমেটের গ্লাসে ময়লা। আমি কিন্তু চোখে কিছু দেখতেছি না...।’

তখন এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমরা ধরছি...’

‘এই গ্লাসটা মুখের ওপর থেকে উঠান না!’ পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন কামরুল ইসলাম।

পরে পুলিশের দুই সদস্য সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুলের দুই হাত ধরে প্রিজন ভ্যানে তুলে দেন। পরে প্রিজন ভ্যানে উঠে যান এস কে সুর চৌধুরী। এরপর তাঁদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে প্রিজন ভ্যানটি।

এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, কামরুল ইসলামের ১৫টি ব্যাংক হিসাবে ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা জমা হয়। অন্যদিকে এসব ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। বর্তমানে জমা আছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এই মন্ত্রীর নামে মামলা করে দুদক।

অন্যদিকে ১৪ জানুয়ারি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হন সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরী। ১৯ জানুয়ারি তাঁর ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে দুদক। এ সময় সঞ্চয়পত্র ও বিমার প্রায় চার কোটি টাকার কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। তাঁর তিনটি ফ্ল্যাটেরও সন্ধান পায় দুদক।