বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। তবে বাংলাদেশের চিত্রটি এখনো অনেকটাই বিপরীত
বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। তবে বাংলাদেশের চিত্রটি এখনো অনেকটাই বিপরীত

সানস্ক্রিন ব্যবহারে অনীহার কারণ কী

রোদের কারণে বাংলাদেশে বছরজুড়ে প্রায় সবাই ত্বক নিয়ে নানারকম বিড়ম্বনার শিকার হন। প্রখর রোদের কারণে পানিশূন্যতা, ত্বক পুড়ে যাওয়া, ত্বকে খসখসে ভাব, ত্বক কুঁচকে যাওয়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়। আমাদের আশপাশের অনেকেই এর ভুক্তভোগী। তারপরও রোদের থেকে ত্বককে বাঁচাতে এখনো বেশির ভাগ মানুষ ভরসা করেন ছাতা বা ছায়ার ওপর। পশ্চিমা দেশগুলোতে তো বটেই, ভারতসহ এই উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। তবে বাংলাদেশের চিত্রটি এখনো অনেকটাই বিপরীত।

সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রতি এ অনীহার কারণ কী? একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত সামিয়া জামান জানান, বাংলাদেশের মানুষের ত্বকের ওপর রোদের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানার ঘাটতি রয়েছে। সারা বছরই রোদ পড়ার কারণে অনেকেই মনে করেন, প্রাকৃতিকভাবে এখানে কোনো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে অনেকেই প্রখর রোদের কারণে ত্বকের নানা ধরনের সমস্যাতেও ভোগেন। তিনি আরও বলেন, এখানে মূল সমস্যা হিসেবে কাজ করে সানস্ক্রিনের দাম। কারণ, বাজারে মানসম্মত সানস্ক্রিন সরবরাহ যেমন পর্যাপ্ত নয়, তেমনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামটাও চড়া। অনেকের পক্ষেই নিয়মিত বিদেশি ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।

ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতান ও প্রসাধনসামগ্রীর জন্য জনপ্রিয় কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৮০ গ্রামের একেকটি সানস্ক্রিন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকায়। সানস্ক্রিন একটি নিত্যব্যবহার্য পণ্য এবং প্রতিদিন ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেই হিসেবে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার অনেকের জন্য বাড়তি খরচের ব্যাপার।

এ ব্যাপারে রাজধানীর একটি বিপণিবিতানের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, মূলত বাংলাদেশে পাওয়া যায় না এমন মানসম্মত সানস্ক্রিন আমদানি করা হয়। ফলে এ–সংক্রান্ত নানা শুল্ক এবং অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সানস্ক্রিনের দাম অনেক বেড়ে যায়।

এ ছাড়া দেশি প্রতিষ্ঠানের তৈরি দেশে উৎপাদিত মানসম্মত সানস্ক্রিনের অভাবের কথাও জানান ওই বিক্রয়কর্মী।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে নানা ধরনের মোড়কে বিভিন্ন নামের সানস্ক্রিন কম দামে পাওয়া যায়। যদিও ক্রেতারা জানেন, এসব ‘নন-ব্র্যান্ড’ সানস্ক্রিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। এ ছাড়া সানস্ক্রিনের মতো পণ্যের যে ধরনের লাইসেন্স বা গুণমান থাকা প্রয়োজন, বলতে গেলে তার কোনোটিই এসব ক্ষেত্রে মানা হয় না। ফলে সচেতন ক্রেতাদের মধ্যেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব পণ্যের তেমন একটা চাহিদা নেই।

একই বিপণিবিতানের আরেক বিক্রয়কর্মী জানান, ক্রেতাদের মধ্যে বর্তমানে ত্বকের যত্ন বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। এখন অনেকেই সানস্ক্রিনের খোঁজ করেন, কেনার পরিমাণও বেড়েছে।

তবে এখনো বাজারে প্রচলিত বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সানস্ক্রিনের যে দাম, সেটি বেশির ভাগ ক্রেতার নাগালের বাইরে বলেই জানান তিনি।

ঐতিহাসিকভাবে গ্রামবাংলার কৃষকেরা রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় ‘মাথাল’ পরতেন। শহরে অনেককেই এখন ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে দৈনন্দিন কাজে বের হওয়া অনেকের পক্ষেই দিনের একটি বড় সময় ছাতা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রোদের তীব্রতা এবং রোদে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণও। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে যেমন সচেতনতা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহার্য পণ্যের সহজলভ্যতা এবং সুলভ মূল্যে প্রাপ্তির ব্যবস্থাও।