
সড়ক নিরাপত্তা—বর্তমান সময়ে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী আলোচ্য বিষয়। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা পড়ছে হুমকির মুখে। তাই এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা তৈরির নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের উদ্যোগে দুই বছর পরপর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘ইউএন গ্লোবাল রোড সেফটি উইক’, যার উদ্দেশ্য সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
বাংলাদেশেও জাতিসংঘ ঘোষিত এ সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহকে ঘিরে সরকারি এবং বেসরকারি অনেক সংস্থা নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। তবে এবারের আয়োজনে ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে মোটরসাইকেলচালকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব’।
এ বছর ‘সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ’ উপলক্ষে ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব ‘সেফ রোড, সেফ রাইড’ নামক একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় তারা দেশের প্রায় ৫৫টি জেলায় একযোগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
স্পিড ব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং পুনঃ রংকরণ, যেন পথচারী ও চালকেরা স্পষ্টভাবে চিহ্নগুলো দেখতে পান এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত রোড সাইন ও ট্রাফিক চিহ্ন মেরামত ও প্রতিস্থাপন, যা সঠিক দিকনির্দেশনায় সহায়তা করবে চালকদের।
সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন, যেখানে সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতন করতে বিভিন্ন বার্তা তুলে ধরা হবে।
এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং রাইডার কমিউনিটির পক্ষ থেকে একটি ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। কারণ, ক্লাব-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শুধু সরকারের একার পক্ষে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সমাজের সবার সমন্বিত উদ্যোগ।
ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাবের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন, ‘সচেতন রাইডারই নিরাপদ সড়কের অন্যতম অংশীদার।’ ক্লাবটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যদি প্রতিটি নাগরিক নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হন এবং একটি ছোট পদক্ষেপও গ্রহণ করেন, তবে সামগ্রিকভাবে দেশের সড়কব্যবস্থায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যাবে। তাই এই বছর ‘রোড সেফটি উইক’-এ ক্লাবটির উদ্যোগ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যা শুধু একটি সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম নয়, বরং একটি বার্তা—‘নিরাপদ সড়ক চাই, সচেতনতা বাড়াই’।
উল্লেখ্য, ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব শুধু মোটরসাইকেলপ্রেমী একটি সংগঠন নয়, বরং এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতাপূর্ণ কমিউনিটি। দেশব্যাপী ক্লাবটির ১৫ হাজারের বেশি নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে। অতীতেও তারা প্রমাণ করেছে, সামাজিক সংকটে তারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। করোনা মহামারিকালীন, ফেনী ও সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা—এ ধরনের প্রাকৃতিক সংকটের সময় ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।
গত বছর ক্লাবটি গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার গাছ রোপণ করে, যা পরিবেশ সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।