সরকার আগামী এক বছরের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন– ব্যবস্থা চালু করতে চায়। এ সময়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন চালু করতে বড়জোর এক বছর সময় লাগবে। এ ফাঁকে একটা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থা চালু করতে গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে একটি বিল তোলা হয়েছে। ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী। এটি পাস হলে সবার জন্য পেনশন-ব্যবস্থা চালু করার আইনি ভিত্তি তৈরি হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করতেই তো অনেক সময় লেগে যাবে, তাহলে এক বছরে কীভাবে সম্ভব—এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাড়াতাড়িই কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। একসঙ্গে সব কাজ চলবে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’
দেশে এখন শুধু সরকারি কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন-সুবিধা পান। সবার জন্য পেনশন চালু করা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল।
অর্থমন্ত্রী গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য ২১টি দিক তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে—
১. ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
২. বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
৩. সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আপাতত নতুন জাতীয় পেনশন-ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁদের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
৪. জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন।
৫. প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে, যা পরবর্তী সময়ে বাধ্যতামূলক করা হবে।
৬. ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।
৭. প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। ফলে, চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে।
৮. সর্বজনীন পেনশন–পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে।
৯. মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসী কর্মীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
১০. সুবিধাভোগীরা বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় তাঁর হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে হিসাব সচল করতে হবে।
১১. সুবিধাভোগীরা আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বাড়তি অর্থ (সর্বনিম্ন ধাপের অতিরিক্ত যেকোনো অঙ্ক) জমা করতে পারবেন।
১২. পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা, অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে।
১৩. পেনশনধারীরা আজীবন, অর্থাৎ মৃত্যুর আগপর্যন্ত পেনশন-সুবিধা ভোগ করবেন।
১৪. নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে জমাকারীর নমিনি বাকি সময়ের (মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
১৫. পেনশন কর্মসূচিতে জমা করা অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
১৬. কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে নিবন্ধিত চাঁদা দানকারী মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
১৭. পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
১৮. এ ব্যবস্থা স্থানান্তরযোগ্য ও সহজগম্য, অর্থাৎ কর্মী চাকরি পরিবর্তন বা স্থান পরিবর্তন করলেও তাঁর অবসর হিসাবের স্থিতি, চাঁদা প্রদান ও অবসরসুবিধা অব্যাহত থাকবে।
১৯. নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের ক্ষেত্রে পেনশন কর্মসূচিতে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারে।
২০. পেনশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে।
২১. পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা করা টাকা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে (সর্বোচ্চ আর্থিক রিটার্ন নিশ্চিতকরণে)।