পেরুর জাতীয় পতাকা
পেরুর জাতীয় পতাকা

বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে

পেরু: আন্দিজের চূড়ায় স্বাধীনতার সূর্যোদয়

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

ডিসেম্বর মাস মানেই বিজয়ের বার্তা, তা সে বাংলার পলিমাটিতেই হোক কিংবা সুদূর আন্দিজের পাহাড়চূড়ায়। আজ আমাদের বিজয়ের মাসের সপ্তম দিনে আমরা শুনব লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর এক মহাকাব্যিক বিজয়ের গল্প। যদিও ক্যালেন্ডারের পাতায় সেই ঐতিহাসিক দিনটি ছিল ৯ ডিসেম্বর, কিন্তু বিজয়ের এই মাসের আবহে আজ আমরা স্মরণ করব ১৮২৪ সালের সেই সময়টিকে, যখন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসনের চূড়ান্ত অবসান ঘটেছিল।

পেরুর স্বাধীনতার এই লড়াই ইতিহাসে ‘আয়াকুচোর যুদ্ধ’ (Battle of Ayacucho) নামে পরিচিত। ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্পেন এই অঞ্চল শাসন করছিল। কিন্তু মুক্তির অগ্নিশিখা জ্বলে উঠেছিল বিপ্লবী নেতা সিমন বলিভারের নেতৃত্বে। তাঁরই যোগ্য সেনাপতি অ্যান্তোনিও জোসে দে সুক্রে ১৮২৪ সালের ডিসেম্বরে আন্দিজ পর্বতমালার প্রায় ১১ হাজার ফুট উচ্চতায় আয়াকুচোর মালভূমিতে স্প্যানিশ বাহিনীর মুখোমুখি হন।

শিল্পীর তুলিতে আয়াকুচোর যুদ্ধ

যুদ্ধক্ষেত্রটি ছিল অত্যন্ত দুর্গম। স্প্যানিশ ‘রয়্যালিস্ট’ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্র ছিল অনেক বেশি। কিন্তু স্বাধীনতাকামী ‘প্যাট্রিয়ট’ বাহিনীর বুকে ছিল দেশমাতার মুক্তির শপথ। মাত্র কয়েক ঘণ্টার এক প্রচণ্ড ও কৌশলী যুদ্ধে জেনারেল সুক্রে স্প্যানিশ বাহিনীকে ধসিয়ে দেন। স্পেনের ভাইসরয় জোসে ডি লা সার্না আহত অবস্থায় বন্দী হন এবং যুদ্ধক্ষেত্রেই আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।

এই একটি বিজয় শুধু পেরুকে স্বাধীন করেনি, বরং এটি ছিল সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা থেকে স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের বিদায়ঘণ্টা। আয়াকুচোর সেই প্রান্তর আজও লাতিন আমেরিকার মানুষের কাছে ‘স্বাধীনতার তীর্থস্থান’।

বিশ্বমানচিত্রে পেরু

বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মতোই পেরুর এই বিজয় ছিল দীর্ঘ শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জবাব। পেরুর এই ইতিহাস আমাদের শেখায়, প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর একটি জাতির সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো শৃঙ্খলই টিকতে পারে না।