
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় সেখানে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে রিৎজ কার্লটন হোটেলে সেই নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার সময় বিএনপি-জামায়াতের একদল সমর্থক বিক্ষোভ করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী সেই বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন।
বাংলাদেশেও বিএনপি–জামায়াত নিয়মিত আন্দোলন–বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। দেশের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না—এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনায় কিসের জন্য ডাকতে যাব, আমাকে বলেন। তাদের ডিমান্ডেরই (দাবি) তো ঠিক নাই।’
গণভবনে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের করা সেই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যখন বৃষ্টি নামছিল, ঠান্ডা..., তখন বলেছিলাম বৃষ্টিতে ওরা কেন ভিজবে, তারা আসুক। আর যা বলতে চায় বলতে পারে। যেহেতু তারা প্রবাসী, আমাদের দেশের মানুষ এ জন্য। আর ঢাকা বা বাংলাদেশে যারা রোদে কষ্ট করছে, তাদের যদি শখেই রোদে থাকতে হয়, থাকুক। তাতে তো আমার কিছু করার নাই।’
নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এখানে বসে বসে কাঁদব? ওহ্ নির্বাচন আসছে, ভয় পাব? কেন ভয় পাব? আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই। কারণ, আমার যে টার্গেট—বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ ডেমোক্রেসি আমরা ফলো করি, ...ব্রিটেনে কীভাবে নির্বাচন হয়? তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবেই করব। তার মধ্যে আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি—পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে নির্বাচনকালীন সরকারে তারা আসতে চায়, আমি নিতে রাজি আছি। এর আগে আমরা নিয়েছি। এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমি আহ্বান করেছিলাম, তারা তো আসেনি। আর এখন তো তারা নাইও সংসদে। কাজেই ওদের নিয়ে চিন্তারও কিছু নাই।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে সরকার হটাবে। আমরা তো তাদেরকে কিছু বলছি না। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতা–কর্মী হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোক আগুনে পোড়া। ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে। ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ পুড়িয়েছে। ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ্বালাও–পোড়াও করে গেছে।’
আন্দোলন করলে আপত্তি নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু জ্বালাও–পোড়াও যদি করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার ওই রকম পোড়ায়, তাহলে তাকে ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না। সেই পোড়া মানুষগুলোর চেহারা বা তাদের যন্ত্রণা, তাদের কষ্ট; আপনাদের কষ্ট হয় না দেখলে?’
বিএনপি কার পয়সায় আন্দোলন করছে, সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি এত অন্ধ হয়ে গেছে, চোখে দেখে না? হাজার হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে, আর কাদের মদদে করছে, সেটা একটু খোঁজ নেন না।’
নির্বাচনী প্রচারে রাস্তা বন্ধ করে সংবাদ প্রকাশ করায় তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গাজীপুরে না কোথায় মিটিং, রাস্তা বন্ধ করে মিটিং হলো কেন? কোনো এক সংবাদপত্র না কারা প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপি যে তার অফিসের সামনে রাস্তা বন্ধ করে মিটিং করে, যে জ্ঞানী লোক কথা বলেন, তাঁর এই দৃশ্য চোখে পড়ে না? এটা তো নির্বাচনী প্রচার। নির্বাচনী প্রচারে এটা হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত পারে আন্দোলন করুক।...আমি আমার জনগণের সাথে আছি। জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের আস্থা, বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি। আমার তো হারাবার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছি। আমি আমার দেশের জন্য কাজ করে যাই।’
আওয়ামী লীগ বেশি কাজ করে, এর পেছনে সবাই লেগে থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওটা আমি কেয়ার করি না। আমি দেশের জন্য কাজ করি, মানুষ ভালো থাকুক সেটাই চাই।’
বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে, এটা অনেকের পছন্দ হবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, যারা গণহত্যা সমর্থন করেছে, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, তাদের এগুলো পছন্দ হবে না। তারা আমার বিরুদ্ধে শত্রুতা করেই যাবে। বোমা পুঁতে মারতে পারে নাই, সরাসরি গুলি করে মারতে পারে নাই, গ্রেনেড হামলা করছে, তা–ও আমি মরি নাই। যতই চেষ্টা করুক। আল্লাহতায়ালা কাজ দেয়, ওই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহই রক্ষা করে। নেতা–কর্মীরা সব সময় পাশে থেকে মানবঢাল তৈরি করে আমাকে বারবার রক্ষা করেছে।’
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আপনি তিনটি দেশ সফর করে এলেন। সফরের অনেক অর্জন। কিন্তু এই অর্জনকে বিতর্কিত করার জন্য অনেক রকমের চেষ্টা হচ্ছে। আপনার সরকারের পক্ষ থেকে কীভাবে এর উত্তর দেওয়া হবে?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার তো থাকবেই। দেশে কিছু লোক আছে, দেশের কাজ যতই ভালো হোক, কোনো কিছু ভালো তারা দেখতে পারে না। এরা হচ্ছে চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির। আর নয়তো তাদের হীনম্মন্যতা। এটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যত রকমের অপপ্রচার তারা চালিয়ে যাচ্ছে। হয় তাদের জ্ঞানের অভাব, আর নয় তাদের দুরভিসন্ধি। অথবা প্রতিহিংসাপরায়ণতা। এটা তো থাকবেই। রাজনীতি যখন করি, রাজনীতিতে সমালোচনা–বিরোধিতা তো থাকবেই। এটা তো খুব স্বাভাবিক।’
আওয়ামী লীগ সরকার তার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ কী ছিল, ২০২৩ সালে দেশ কোথায় এসেছে—এই হিসাব করলেই তো বাংলাদেশ কত দূর এগিয়ে তা সাধারণ মানুষ জানতে পারে। একটা বিষয়, অতি দরিদ্রের হার ২৫ ভাগ ছিল, সেটা আমরা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামাতে পেরেছি। তার মানে কী? আমাদের অতি দরিদ্র বলে এখন আর তেমন কিছু নেই। যেটুকু আছে, তাদের আমরা ব্যবস্থা করে দেব, অসুবিধা হবে না।’
সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫ সালে আমরা যখন সবার বেতন–ভাতা বৃদ্ধি করি, তখন একটা প্রভিশন (বিধান) রেখেছিলাম যে মূল্যস্ফীতির সাথে সাথে একটা হার অনুযায়ী বেতন বাড়বে। তারও একটা সময় সুনির্দিষ্ট করা ছিল। মূল্যস্ফীতি একটু বৃদ্ধি পেয়েছে দেখে, সেই জায়গাটা আবার একটু নতুনভাবে কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেটা চিন্তা করছি। প্রতিবছরের হিসাবমতো মূল্যস্ফীতি যত বাড়বে, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটা হারে বেতন বাড়াই। তা ছাড়া আমরা তো অনেকগুলো সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে নানা ধরনের ভাতা, ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ, গাড়ি কেনার জন্য ঋণ, বাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা—অনেক রকম সুযোগ–সুবিধা করে দিয়েছি। বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু সকলের ক্ষেত্রেই। কাজেই মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।’
বেসরকারি খাত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা তো বেসরকারি খাতের বিষয়। এটা তো সরকারের ব্যাপার না। করোনাভাইরাসের সময় বেসরকারি খাত যেন বিপদে না পড়ে, আমরা তো প্রণোদনা দিয়েছি। তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকি পর্যন্ত দিয়েছি। সার্বিকভাবে যে হারে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি, এটাই তো আমাদের বাজেটে সব থেকে বেশি বিপদে ফেলছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এ রকম দেয় না। বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে লাভ কে বেশি পায়? যে সবচেয়ে বেশি এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) চালায়, তার সব থেকে বেশি লাভ হয়। গরিব মানুষের তো লাভ হয় না। তারা তো কত ওয়াট পর্যন্ত এমনি ফ্রি পায়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদেরকে বিরাট অংশ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। জ্বালানি তেল পরিবহন এত বেড়ে গেছে, এটা তো টানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এখন আমরা যেটা করেছি, মূল্যস্ফীতির সাথে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এটা অটোমেটিক যেভাবে হয়, তার জন্য আইন করে দিয়েছি। আগামীতে আমরা সেটাই করব। যে দামে উৎপাদন হবে, সেই দামেই কিনতে হবে। যে যতটুকু পারবেন, ততটুকু কিনবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার তো কোনো যুক্তি নাই।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘গণমাধ্যম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান যেসব আইন আছে, গণমাধ্যমের মালিকেরা তার কিছুই অনুসরণ করছেন না। ফলে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ সাংবাদিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পেতে পারি কি না?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংবাদকর্মী, শিল্পী, কলাকুশলীদের সুবিধার জন্য এতগুলো টেলিভিশন বেসরকারি খাতে দিয়েছি। পত্রিকা যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে। পত্রিকার মালিকেরা বেসরকারি খাতের। মালিক যারা তারা সবাই অর্থশালী, বিত্তশালী। সেই মালিকদেরই উচিত, যে সাংবাদিকদের তারা কাজ দেয়, ব্যবহার করে তাদের ভালো–মন্দ দেখা। এখানে সরকারের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ আছে কি না জানি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে যতটুকু করার করে যাচ্ছি। আমাদের সরকার নাকি কথাই বলতে দেয় না। সংবাদপত্রের নাকি স্বাধীনতাই নাই। যা ইচ্ছা আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখে। টক শো করতে করতে টক টক কথাও বলে। একটু যদি মিষ্টি টক মিশিয়ে কথা বলে, তাও তো শুনতে ভালো লাগে। তাও বলে না। তারপরও বলে যে কথা বলতে দিই না।’
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়ের কারণে এলএনজি জাহাজগুলো কিন্তু সরিয়ে নিতে হয়েছে। যাতে ঝড়ে কোনো ক্ষতি না হয়। পাইপ ভেসে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে পাইপ লাগানো আছে। জাহাজ এসে ভেড়ে। সাগরের নিচে ডুবুরি দিয়ে জাহাজের সঙ্গে পাইপের সংযোগ দেওয়া হয়। এগুলো খুলে জাহাজ নিরাপদ জায়গায় নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সাগরের ঢেউয়ের একটা হিসাব আছে। সেই হিসাবের বেশি হলেই আমরা সবকিছু সরিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতি হবে না, সেখানে সরানো হয়েছে। এখন আবার আস্তে আস্তে সেট করতে হবে। সেটা তো শুরু থেকেই বলা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্বলতা কোথায়?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়ের কারণে সাগরের নিচের দিকের পানি উত্তাল হয়ে অনেকটা ঘোলা হয়ে যায়। ঘোলা পানিতে কোনো ডুবুরি কাজ করতে পারবেন না। এর জন্য বিশেষ ডুবুরি লাগে। তিনি বলেন, ‘সেই বিশেষ ডুবুরি এনে এলএনজি জাহাজের সঙ্গে আমাদের পাইপলাইনের সংযোগ করতে হবে। এটা করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কাজেই সেই সময়টা দিতে হবে। সাগর যখন শান্ত হবে, পানি স্থিতিশীল হবে, ডুবুরি তখনই নামতে পারবে, তখনই কাজটা করতে পারবে। সে জন্যই সমস্যাটা হচ্ছে। তাই বলে দুর্বলতার কিছু নেই। বরং এটা যথেষ্ট সবলতা। সারা বিশ্বেই এ রকম হয়।’
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দুর্বলতা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝড় আসছে, খালেদা জিয়া (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) জানেন না। তিনি ঘুমাচ্ছেন। বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রধান গলফ খেলছিলেন। ওদিকে সব ভেঙেচুরে শেষ। তারা জানেও না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ সবার আগে সেখানে পৌঁছেছিলাম। তখন বিএনপি সরকারের কেউ যায়নি। তারপর সংসদে যখন কথা তুললাম, তখন খালেদা জিয়া বললেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল, তত মানুষ মরে নাই। আমি বলেছিলাম, কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে, সেটাও বলে দেন। দুর্বলতা সেখানে। আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো দুর্বলতা নাই। আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি।’
যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেবে, তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কিনবে না বাংলাদেশ—এমন একটি ধারা অর্থ মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ওপর যারা স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে কিচ্ছু কিনব না, পরিষ্কার কথা। এর মধ্যে দুটি অ্যাকশন আমি নিয়েছি আগেই। বলব না আমি সব। সাংবাদিকেরা খবর না রাখলে আমি কেন বলতে যাব? তাতে কী হয়েছে, আমার কিচ্ছু হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদেরকে কী কারণে স্যাংশন দিল? যাদেরকে দিয়ে সন্ত্রাস দূর করলাম। সারা বিশ্ব জঙ্গিবাদে জর্জরিত, সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। সে সময় আমাদের দেশে একটি মাত্র ঘটনা ঘটেছে হলি আর্টিজানে। অনেকে বলেছিল, এটা বাংলাদেশ একা সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু আমাদের তো ২৪ ঘণ্টাও লাগেনি। তার মধ্যেই আমরা মানুষ জীবিতও উদ্ধার করলাম, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপরও আমরা আঘাত হানতে পেরেছি। তারপর আর বাংলাদেশে এ রকম বড় ঘটনা ঘটতে পারেনি। কারণ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি ও এতভাবে কাজ করেছে যে আর কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি। এর পরে স্যাংশনটা কিসের জন্য? সে জন্যই তো আমার প্রশ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়কে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি, আমরা যে বিদেশ থেকে জিনিস ক্রয় করি, সেখানে একটা ক্লজ (ধারা) থাকবে—যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কেনাকাটা করব না। এতে সংকটের, ভয়ের কী আছে?’
বাংলাদেশ এখন আর কারও ওপর নির্ভরশীল নয় বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেটা নিয়ে সমস্যা হয়, আমরা উৎপাদন করে সে সমস্যার সমাধান করতে পারি। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। দেশের সাধারণ মানুষ জেনে গেছে, তাদের যেখানে যত অনাবাদি জমি, তারা চাষ করছে।’
এত দুশ্চিন্তার কী আছে—এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথা নাই বার্তা নাই, ওমনি স্যাংশনের ভয় দেখাবে। আর আমরা ভয়ে চুপ হয়ে বসে থাকব, কেন? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যারা আমাদের সপ্তম নৌবহরের ভয় দেখিয়েছিল, সেটাও পার করে বিজয় অর্জন করেছি। এ কথা ভুললে চলবে না। এই আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে চলতে হবে। এক বেলা খেয়ে থাকব, তাতে অসুবিধা নাই।’
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয়টা হলো দেশের কিছু মানুষই বাংলাদেশের বদনাম করে। তাদের স্বার্থ রক্ষা, তারা যে কত রকমের দুর্নীতি, অপকর্ম, মানি লন্ডারিং—কত কিছুর সঙ্গে জড়িত, সেগুলো তো সাংবাদিকেরা খুঁজে বের করেন না। বের করলে দেখা যাবে সেখানে অনেককেই পাওয়া যাবে। এরাই বাংলাদেশের বদনাম করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লেবার লিডার (শ্রমিকনেতা) আছেন। নিজেরা খাবেনদাবেন, ভালোভাবে চলবেন, দামি গাড়িতে চলবেন। পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করেন। মামলা করে, মামলা করে কয়টা মামলার রায় পাওয়া গেছে? প্রত্যেক মামলার পরে আসে নেগোসিয়েশন (সমঝোতা)। নেগোসিয়েশন মানেই তো আদান–প্রদান। আয়েশে থেকে বাংলাদেশের বদনামটা করে আসে।’
উর্বর ভূমির দেশ বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ অনেক শক্তিশালী। আমাদের নারীসমাজ, যুবসমাজ, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকে কাজ করে। নিজেরা কাজ করে নিজেরা খাব।’