ফল ঘোষণার সময় সিনেট ভবনে উল্লসিত ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ ও মুহা. মহিউদ্দীন খান (বাঁ থেকে)। তাঁরা ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ফল ঘোষণার সময় সিনেট ভবনে উল্লসিত ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ ও মুহা. মহিউদ্দীন খান (বাঁ থেকে)। তাঁরা ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিশ্লেষণ

ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় জয় যেসব কারণে

‘ক্লিন ইমেজ’-এর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাত্র সংসদ ও ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে। সুসংগঠিতভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রশিবিরের দলীয় কর্মসূচি ও শিক্ষার্থীবান্ধব নানা কর্মকাণ্ড পৌঁছে দেওয়ায় এ অভাবনীয় জয় হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক ও ডাকসুর এক সাবেক জিএস। তাঁদের মতে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) সংগঠিত ছিল না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে তারা কর্মপরিকল্পনা সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে পারেনি। শিবিরের প্রার্থীদের তুলনায় ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বাম সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি বাদে এবারের ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদের নির্বাচন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। যদিও ছাত্রদল, বাগছাস, ছাত্র ইউনিয়ন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন।’

হল ছাত্র সংসদ ও ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথম ছাত্রশিবির ভিপি, জিএস, এজিএসসহ বেশির ভাগ আসনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা এর আগে হল সংসদ ও ডাকসু নির্বাচনে এমন কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেননি।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রশিবির একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনের ছেলেরা ক্যাডারভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি করে, এটাই তাদের ঐতিহ্য।’

শিবিরের ছেলে-মেয়েরা নানামুখী পড়াশোনা করে, তাদের একাডেমিক ক্যারিয়ারে সাফল্য ঈর্ষণীয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। এদের বেশির ভাগেরই আচরণ ভালো। শিবিরের ছেলেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খবর তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রশিবিরের প্রতি ‘পজিটিভ ইমেজ’ তৈরি হয়েছে।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানাইজডভাবে ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনটি জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম সারির দুই নেতাকে ডাকসুর ভিপি ও জিএস প্রার্থী করেছে। তারা প্রতিটি হল, ফ্যাকাল্টি ও ক্যাম্পাসের আশপাশের ছাত্রাবাসগুলোতে জনসংযোগ করেছে। ছাত্রশিবিরের এবারের ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় এক বছরের। এই সময়ে তারা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।

অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বেশ পরে নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিত ও ডেডিকেটেড প্রার্থী খুব বেশি ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পুরোনো একটি অংশকে তারা এবার প্রার্থীই করেনি। এর ফলে তারা ভোটের ক্যাম্পেইনে ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল। ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের সাংগঠনিক এজেন্ডা নিয়ে ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন’ করতে পারেনি।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মতে, ‘ছাত্রশিবির ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল, ফ্যাকাল্টি ও আশপাশের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। সংগঠনটি তাদের কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেছে। পাশাপাশি তাদের ক্যারিয়ার ও প্রযুক্তিগত নানামুখী প্রশিক্ষণ দিয়েছে। শিবিরের কর্মীদের সাংগঠনিক দক্ষতা, যোগাযোগ ও কর্মপন্থা ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন এবং বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর তুলনায় বেশ দক্ষ ও কার্যকর ছিল।’

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

তাঁর মতে, ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে সামাজিক আন্দোলনের মতো করে কাজ করেছে। শিবিরের ছেলে-মেয়েরা নানামুখী পড়াশোনা করে, তাদের একাডেমিক ক্যারিয়ারে সাফল্য ঈর্ষণীয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। এদের বেশির ভাগেরই আচরণ ভালো। শিবিরের ছেলেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খবর তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রশিবিরের প্রতি ‘পজিটিভ ইমেজ’ তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা গতানুগতিক ছাত্ররাজনীতির বাইরে ছাত্রশিবিরের ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড কর্মকাণ্ড পছন্দ করেন। তাঁরা হলে ফাউ খাওয়া, বাকিতে খাওয়া, মারামারি, চাঁদাবাজি, গেস্টরুম কালচার ও টর্চার সেল পছন্দ করেন না। শিক্ষার্থীরা চান, তাঁদের জন্য যে বা যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদেরকেই তাঁরা ভোট দেবেন। ডাকসু ও হল সংসদের ভোটের ফলাফলে প্রমাণও মিলেছে। এবার ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা মেয়েদের প্রচুর ভোট পেয়েছেন, যা তাঁদের অভাবনীয় জয়কে ত্বরান্বিত করেছে।

ফলাফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী-সমর্থকেরা। তিনজন আলিঙ্গন করছেন। আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে

ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মেয়েরা সামনের সারিতে ছিলেন। তাঁরা আন্দোলনে গিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের হাতে শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে ছাত্রশিবির মেয়েদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ও কলেজে পড়াকালীন ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ডের বা ইসলামিক অ্যাকটিভিটির ওরিয়েন্টেশন পান। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ওই সব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থার মাধ্যমে সেই পরিবেশ পেয়ে সংগঠনমুখী হন। দীর্ঘদিনের সেই প্র্যাকটিস এবার তাঁরা ভোটের মাঠে কাজে লাগিয়েছেন।

ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের আর্থিক, পড়ালেখা, কোচিংসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে। এই কাজ ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলো খুব একটা করে না। তাই এবার ভোটে ছাত্রশিবির একতরফাভাবে জিতেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব আগামী সংসদ নির্বাচনে খুব বেশি পড়বে বলে মনে হয় না। তাঁর মতে, ‘দেশব্যাপী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি, দখল ও মব সন্ত্রাসের খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে ছড়িয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব খবর ভালোভাবে নেয়নি। তারা একটা ইতিবাচক বিরাট পরিবর্তন চেয়েছে। নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটেছে বলে আমি মনে করি।’

অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিনের মতে, ‘ছাত্রদলের মেসেজ শিক্ষার্থীদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায়নি। কারণ, সংগঠনটির ছেলে-মেয়েরা ছাত্রলীগের অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিল না। তারা বাইরে থেকে খুবই অল্প পরিসরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে পেরেছে।’

‘দখলবাজি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ছাত্রদলের শপথকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করেনি। সারা দেশে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ ধরনের কাজেই লিপ্ত।
ড. মুশতাক হোসেন

তাঁর মতে, ‘ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখেছে। তাঁবেদার সরকার দেশবিরোধী এজেন্ডা এই দেশে বাস্তবায়ন করত, যা তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ তুঙ্গে। ছাত্রশিবির এটাকে ‘পুঁজি’ করেছে। তাদের ধর্মীয় অনুভূতি ও দেশপ্রেমবিষয়ক প্রচার-প্রচারণা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ছাত্রশিবিরের সাইবার ও সোশ্যাল মিডিয়া টিম ভোটের আগে ভীষণ অ্যাকটিভ ছিল। তাদের প্রত্যেক সদস্য সারাক্ষণ অনলাইনে ক্যাম্পেইন করেছে।’

ডাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল

সর্বোপরি ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা জুলাই অভ্যুত্থানপরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ইসলামিক কালচার ও আদর্শ নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। যার ফলাফল ডাকসু নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করেন ড. মোসলেহ উদ্দিন আহমদ।

ভোটের দিন কিছু শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কোনো কোনো রিটার্নিং অফিসারের আচরণ পক্ষপাতমূলক ছিল, যা ভোটকে কিছুটা হলেও ‘বিতর্কিত’ করেছে। নির্বাচনে দায়িত্বপালনরত শিক্ষকেরা আচরণবিধি ভালো করে পড়েননি। গণমাধ্যমের সামনে কোনো কোনো শিক্ষক প্রার্থীদের অযথাই অভিযুক্ত করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ বিষয়গুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকদের আরও নিরপেক্ষ ও সতর্ক থাকা দরকার ছিল।

ছাত্রশিবিরের সাইবার ও সোশ্যাল মিডিয়া টিম ভোটের আগে ভীষণ অ্যাকটিভ ছিল। তাদের প্রত্যেক সদস্য সারাক্ষণ অনলাইনে ক্যাম্পেইন করেছে।’
অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমদ

এদিকে ১৯৮৯-৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে জিএস পদে বিজয়ী হয়েছিলেন জাসদ ছাত্রলীগ সমর্থিত প্রার্থী ড. মুশতাক হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এবারের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির বিপরীতে কোনো শক্তিশালী আদর্শিক ছাত্রসংগঠন ছিল না। যে সংগঠন শিবিরের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিত করার চেষ্টা করেছে, তারা সাংগঠনিকভাবে বিস্তৃত হলেও নিকট অতীতে তারা শিবিরের সঙ্গে একই রাজনৈতিক লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ ছিল। তাই ডাকসুর ভোটাররা তাদের তুলনায় শিবিরকেই ‘শ্রেয়তর’ বিবেচনা করেছে।’

ড. মুশতাক হোসেন, ডাকসুর সাবেক জিএস

ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক শক্তি সরকার পরিচালনা করেছে, তাদের প্রতি ছাত্রসমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ছাত্রসমাজ এতটাই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে যে ছাত্রশিবিরের মতো ধর্মভিত্তিক, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সংগঠনকেও তারা নেতৃত্বের সুযোগ দিতে চেয়েছে। এ ছাড়া বিগত দিনে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আওয়ামীপন্থী ছাত্রলীগের অত্যাচার-নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠনটিকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ঘৃণাভরে দেখার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের দোহাইকেও অকার্যকর করে দিয়েছে।’

ড. মুশতাকের মতে, ‘দখলবাজি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ছাত্রদলের শপথকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করেনি। সারা দেশে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ ধরনের কাজেই লিপ্ত। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রচলিত রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, তারা সেই পুরোনো রাজনৈতিক অপকৌশল ব্যবহার করেই নিজেদের দলকে শক্তিশালী করার পথে হেঁটেছে। তারাও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ‘মব সন্ত্রাস’ করেছে। এর ফলে দেশবাসীর পাশাপাশি ছাত্রসমাজও তাদের প্রতি হতাশ হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি ছাত্রসমাজের অনুকূল মনোভাব থাকলেও এত বিশালসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের সমর্থনকে সংগঠিত করার মতো কাঠামো তাদের ছিল না। স্বতন্ত্র পরিচয়ে সেটা সম্ভবও নয়। তারপরও কোনো কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট চমকে দেওয়ার মতো ছিল, যেটা আগে দেখা যায়নি।’

ডাকসু নির্বাচনের ভোট গণনার প্রক্রিয়া সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশবাসীর মনে ক্ষোভ তৈরি করেছে জানিয়ে ডাকসুর সাবেক এই জিএস বলেন, ‘ভোট গণনা আরও বিজ্ঞানভিত্তিক ও সহজ করতে হবে। প্রায় ৩৯ হাজার ভোটের ফলাফল পরদিন দুপুরে ঘোষণা করলে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এ ছাড়া নির্বাচনে দায়িত্বপালনরত শিক্ষকদের মিডিয়ার সামনে বাড়াবাড়ি কর্মকাণ্ড নির্বাচনকে কিছুটা হলেও বিতর্কিত করেছে।’