খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের ভিড়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের ভিড়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর

নেত্রী নেই, নীরবতা আছে—হাসপাতালে শোকাবহ অবস্থা

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই হাসপাতালটিতে নিয়মিত আসছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেত্রীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে আসা-যাওয়ার পথে তাঁকে দেখা যেত নিয়ম করেই। তবে আজ মঙ্গলবার সকালের চিত্রটা ভিন্ন ছিল; হাসপাতালের অডিটরিয়ামে বিএনপির এই নেতাকে দেখা গেল সবচেয়ে বেশি বিষণ্ন।

সকালের সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য শুরু করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই সংবাদটি (খালেদা জিয়ার মৃত্যু) নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে হবে, এটা আমরা কখনো ভাবিনি। আমরা আবারও আশা করছিলাম, তিনি আবারও আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

এ সময় অডিটরিয়ামজুড়ে ছিল শোকাবহ অবস্থা। সাংবাদিকদের ভিড়ে থাকা বিএনপির নেতা–কর্মীদের কেউ কেউ কান্না করছিলেন তাঁদের দলীয় প্রধানের জন্য। সেখানে উপস্থিত দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও বিমর্ষ ছিলেন অভিভাবককে হারিয়ে।

হাসপাতালের চতুর্থ তলার করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে গিয়ে দেখা গেল বিএনপির উপস্থিত নেতা–কর্মীরা কেউ বসে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে আছেন। আজ তাঁদের মধ্যে কোনো উচ্ছ্বলতা নেই, নেই কোনো চিরাচরিত ব্যস্ততাও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিসিইউর সামনে ভিড় কিছুটা কমতে থাকে নেতা–কর্মীদের।

হাসপাতালের অভ্যর্থনা টেবিল এবং তল্লাশি পেরিয়ে লবিতে অপেক্ষামাণ নেতা–কর্মীরা বসে আছেন গভীর শোক নিয়ে। কেউ কেউ চোখের কোণ গড়িয়ে পড়া পানি মুছে শক্ত থাকার চেষ্টা করছিলেন; উপস্থিত নেতা–কর্মীরা একে অপরকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টাও করছিলেন। হাসপাতালজুড়েই ছিল প্রায় একই চিত্র। হাসপাতালে আসা–যাওয়ার মধ্যে আছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আছেন তাঁদের সমর্থক ও স্বজনেরাও।

নেত্রীর শোকে কান্নারত তাঁরা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ঘিরে হাসপাতালের যেসব কর্মীরা নিজের দায়িত্ব পালন করেছিলেন উৎসাহ নিয়ে, খালেদা জিয়ার বিদায়ের শোক ছাপিয়ে গেছে তাঁদেরও। তাঁরা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন নিয়ম করেই, তবে বেদনাসিক্ত হয়ে; হয়তো দায়িত্ব কিংবা পেশার তাগিদে শোকে শামিল হওয়ার সরাসরি সুযোগ নেই তাঁদের। তবে তাঁদের চোখ-মুখ আর শরীরের ভাষা বলে দিচ্ছে সেই শোকের মিছিলে তাঁরাও আছেন।

সকালের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর জানাতে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার।

২৩ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওনাকে (খালেদা জিয়া) সুস্থ করার জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। মেডিকেল বোর্ড আজ সকাল ছয়টায়, ৩০ ডিসেম্বর ওনাকে (খালেদা জিয়া) ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করা হয়।’

২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে শেষবারের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এক মাসের কিছু বেশি সময় তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন। আজ সকাল ছয়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।