সড়কে শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত কোনো এক পক্ষের কাজ নয়। সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সমন্বিত কাজের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে আলোচকেরা এসব মত দেন।
‘সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ এবং সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রমের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের আয়োজন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সংলাপের শুরুতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে করণীয় নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয় এতে। সেই সঙ্গে জাতীয় বাজেটে সড়ক পরিবহন–সংশ্লিষ্ট খাতে মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যয় করার দাবি জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যেটা দরকার, একটা কানেকশন তৈরি করে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারা। রোড সেফটির সঙ্গে কিন্তু অনেক কিছু ইনভলভ। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এবারের জাতীয় বাজেটে সড়ক পরিবহন খাতের ব্যয়ের ১৩ শতাংশ সড়ক নিরাপত্তায় ব্যয় করার প্রস্তাব করা হবে জানিয়ে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এই গভর্মেন্টটা তো লিমিটেড টাইমের জন্য এসেছে। উই ক্যান অ্যাকচুয়ালি স্টার্ট দ্য প্রসেস। হোপফুলি নেক্সট গভর্মেন্ট এসে হয়তো জিনিসটা দেখবে। পুরো জিনিসটা আসলে থাকা উচিত আন্ডার ওয়ান আমব্রেলা।’
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোম্পানিভিত্তিক যানবাহন পরিচালনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন। তিনি বলেন, ‘আর কোনো উপায় নাই। তা না হলে শৃঙ্খলা কখনোই আসবে না।’ ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ডাম্পিংসহ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজের আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, সড়ক নিরাপত্তায় প্রথমে দেখতে হবে, বিজ্ঞানভিত্তিক সড়ক পরিকল্পনা হয়েছে কি না।
ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) জ্যেষ্ঠ রোড সেফটি স্পেশালিস্ট মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমরা রাজধানীর সব প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেছি। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কাউকে বাদ দিয়ে, কাউকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে হবে না।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, যাঁরা এ খাতের নীতিনির্ধারণী কাজ করেন, তাঁরা গণপরিবহন ব্যবহার করেন না, ফলে তাঁদের উপলব্ধি নেই। প্রয়োজনীয় বাজেট বাড়াতে হবে। লুটপাট বন্ধ করতে হবে। গণপরিবহনে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য গণপরিবহন—এমন একটি জনবান্ধব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান কামরান উল বাসেত, হাসিনা বেগম ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর, বিআরটিএর সাবেক বোর্ড সদস্য আবদুল হক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রকৌশলী শাহীন সরকার, ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম খান প্রমুখ।