
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। রোববার প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর সই করা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রোববার প্রকাশিত এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।
এর আগে আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সেদিন বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বিচারপতিদের অপসারণের দাবিতে ওই দিন সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং। সেদিন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়, হাইকোর্ট বিভাগে ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। কোন ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না, তাঁদের নাম তখন প্রকাশ করা হয়নি। গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে তাঁদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
ওই ১২ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানও ছিলেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। পৃথক মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার রায় হয়েছিল। তখন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫–এর বিচারক ছিলেন মো. আখতারুজ্জামান। ১৯৯৩ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিসে সহকারী বিচারক হিসেবে যোগ দেন মো. আখতারুজ্জামান। ২০১৫ সালের ১৪ জুন জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।
এর আগে ২১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্যসংবলিত তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতির বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তাঁদের বেঞ্চ প্রদান থেকে বিরত থাকেন। তাঁদের মধ্যে একজন (বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন) গত ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন। বিচারপতি খিজির হায়াতকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে চলতি বছরের ২১ মে অপসারণ করা হয়।
অপর দুজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস) ইতিমধ্যে অবসরগ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তাঁদের চাকরিকালীন মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দুজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন) হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত বছরের ৩০ জুলাই তাঁদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আরও ছয় মাসের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। গত ৩০ জানুয়ারি তাঁদের বর্ধিত ওই মেয়াদ শেষ হয়।
অপর পাঁচ বিচারপতির বিষয়ে কাউন্সিলের তদন্ত কার্যক্রম চলমান বলে ২১ আগস্টের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এই পাঁচ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে প্রকাশিত এক নিউজ আপডেটে বলা হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ২৬ আগস্ট বিচারক মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে পদত্যাগপত্র দিলেন বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।