২০২১ সালের এপ্রিল থেকে জলাবদ্ধ মাঠ। জন্মেছে কচুরিপানাও। মাঠের দুই-তৃতীয়াংশ এখন ব্যবহারের অনুপযোগী।
পানিতে ভাসছে কচুরিপানা ও বিভিন্ন লতাপাতা। ফাঁকে ফাঁকে আছে নানা জলজ ফুল। পানির ওপরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট পোকামাকড়। এক পাশে চড়ে বেড়াচ্ছে গবাদিপশুও। দেখে মনে হতে পারে, কোনো বিশাল জলাশয় বা ডোবা। তবে সে ভুল ধারণা ভাঙবে পাশে থাকা বিদ্যালয় দেখার পর। পানি ও কচুরিপানা জমে থাকা জায়গাটি মূলত চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। তিন বছর ধরে মাঠটি পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম বাকলিয়ায় অবস্থিত বিদ্যালয়টি। শিক্ষকেরা জানান, মাঠটি আশপাশের সড়কের তুলনায় নিচু। তার ওপর নেই পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা। ফলে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ঢুকে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। পানি সরানোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এটি এখন জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। পানি ও কচুরিপানা জমে মাঠের দুই-তৃতীয়াংশ এখন ব্যবহারের অনুপযোগী।
প্রায় দুই একর মাঠের দেড় একরের মতো এখন ডোবায় রূপ নিয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্মেছে কচুরিপানা। ভাসছে ময়লা-আবর্জনা।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির বর্তমান আয়তন ৫ দশমিক ৩১ একর। ২০০৯ সালে চালু হয় বিদ্যালয়ের প্রাত শাখা। এর আগ পর্যন্ত কেবল ছাত্রদের পড়ার সুযোগ ছিল। বিদ্যালয়ে দুই পালায় মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৮২। এর মধ্যে প্রাত শাখায় ১ হাজার ১৯ ছাত্রী ও দিবা শাখায় ১ হাজার ৬৩ জন ছাত্র রয়েছে। মাঠের এ দশার কারণে নষ্ট হয়েছে তাঁদের খেলাধুলার পরিবেশ।
বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের খালপাড় গেট দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যাবে, বিশাল মাঠে জমে আছে পানি। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, প্রায় দুই একর মাঠের দেড় একরের মতো এখন ডোবায় রূপ নিয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্মেছে কচুরিপানা। ভাসছে ময়লা-আবর্জনা। তার পাশে সরু রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করে শিক্ষার্থীরা। চলাচলের জন্য পাঁচ–ছয় ফুট প্রস্থের সড়কটি উঁচু করা হয়েছে কয়েক দফা। পূর্ব দিকের প্রধান গেট দিয়েও প্রবেশের পথ রয়েছে। তবে সে পাশে মূল রাস্তার সংস্কারকাজ চলছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করে খালপাড় গেট দিয়ে।
এ গেটের এক পাশে চাক্তাই খাল। সে খাল থেকে মাঠের উচ্চতা কম। আশপাশের এলাকার সড়কগুলো মাঠের তুলনায় উঁচু। মাঠটি সড়ক থেকে প্রায় দুই ফুট নিচু। ফলে বৃষ্টিতে সড়কে পানি উঠলে তা মাঠে এসে পড়ে। বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে আরেকটি সরু জায়গায় চলে জাতীয় সংগীত পরিবেশন। সেখানে ছোট পরিসরে খেলাধুলা করে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেল, শুধু খেলার মাঠ নয়, প্রশাসনিক-একাডেমিক তিন ভবনের চারপাশ কচুরিপানা, ময়লা-আবর্জনা ও পানিতে ডুবে গেছে। ফলে বিদ্যালয়ের পুরো এলাকা ঘুরে বেড়াতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এসব পানির কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কথা বলে জানা গেল, বৃষ্টির মৌসুমে এ মাঠে খেলা বন্ধ থাকে পানির কারণে। আগে শুষ্ক মৌসুমে পুরো মাঠে খেলাধুলা করা গেলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না।
বিদ্যালয় থেকে মেয়েকে নিতে আসা অভিভাবক আবদুল আজিজ বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার পরিবেশ দরকার শিক্ষার্থীদের। এতে তাদের মানসিক বিকাশ হয়। কিন্তু খেলার মাঠটি পানিতে ডুবে থাকায় সে সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। বর্ষা মৌসুমে অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনতে চান না পানির কারণে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। এরপর শীতকালে কিছুদিন পানি সরে যায়। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে মাঠের পানি আর নামেনি।
মাঠ সংস্কারে এরপর জেলা প্রশাসন বরাবর চার দফা চিঠি দিয়েও সমাধান পাননি বলে জানান বাকলিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশাল মাঠ থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিশাল মাঠ অবশ্যই সংস্কার করা হবে। মাঠের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ভূমি অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।