উমামা ফাতেমা
উমামা ফাতেমা

সাক্ষাৎকার: উমামা ফাতেমা

আন্দোলনের গতিমুখ নির্ধারণ করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব নারী শিক্ষার্থী অগ্রভাগে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম উমামা ফাতেমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নারীদের প্রত্যাশা—এসব বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার

প্রশ্ন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হলেন। বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন?

উমামা ফাতেমা: শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়াগুলো আমরা তাঁদের মাধ্যমে আদায় করে আনতে পারব বলে মনে করি। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। আমরা খুবই খুশি যে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুজন শিক্ষার্থী–প্রতিনিধি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

প্রশ্ন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মে নারী শিক্ষার্থী বা ছাত্রীদের অংশগ্রহণ এবং অবস্থান কেমন?

উমামা ফাতেমা: গত জুনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু সময় যত গড়ায়, বিশেষ করে জুলাই মাসে যখন মূল আন্দোলন শুরু হয়, তখন ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রী হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে গ্রন্থাগারের সামনে এসে জড়ো হতেন এবং সেখান থেকে শাহবাগ মোড়ে যেতেন। পরবর্তী সময়ে পুরো আন্দোলনের গতিমুখ নির্ধারিত হয়েছে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কারণে। নারী শিক্ষার্থীরা যদি এত ব্যাপক হারে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা না রাখতেন, তাহলে আন্দোলনের ওপর অত্যাচারের মাত্রাটা অনেকখানি বেড়ে যেত এবং আন্দোলন সফল না হওয়ারও আশঙ্কা ছিল।

প্রশ্ন

নতুন সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

উমামা ফাতেমা: নতুন সরকারের কাছে অবশ্যই আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা। এ ছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের সঠিক তালিকা করা। শহীদদের পরিবারকে বার্ষিক ভাতা দিতে হবে। অসংখ্য মানুষ আন্দোলনে আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আহত ব্যক্তিদের তালিকা করে চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসতে হবে। এগুলো আমাদের তাৎক্ষণিক দাবি। দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের পরিকল্পনা...। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারকে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন

নারীদের জন্য এই সরকারের কাছে আপনারা কী চান?

উমামা ফাতেমা: সরকারের অবশ্যই উচিত নারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা, যাতে একজন নারী যেকোনো সময়ে কোনো ধরনের সহিংসতার ভয় ছাড়াই বাসা থেকে বের হতে পারেন। একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থাকতে হবে, যাতে যৌন নিপীড়নের যেকোনো ঘটনার বিচার করা যায়। অফিস–আদালতেও যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করা জরুরি। একজন নারী যাতে তাঁর সহকর্মী, শিক্ষক বা বন্ধু কারও নিপীড়নের শিকার না হন। সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতিটি অফিসে ডে–কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

প্রশ্ন

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের প্রস্তাবনা কী?

উমামা ফাতেমা: রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি জানাতেই পারে। সেই স্বাধীনতা তাদের আছে। তবে আমাদের ছাত্র–জনতার বড় অংশ মনে করে, দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক কাঠামো রয়েছে, তা যেকোনো দলকেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার ক্ষমতা দেয়। এই রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার না করে কোনোভাবেই শুধু রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন করাটাকে আমরা সমর্থন করি না। বরং সময় নিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার, সংবিধান সংস্কার এবং আইনগুলোকে পরিশীলিত করা প্রয়োজন। দেশকে সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত হবে।

প্রশ্ন

আপনাকে ধন্যবাদ।

উমামা ফাতেমা: আপনাকেও ধন্যবাদ।