স্মরণসভায় সাবেক সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের স্মৃতিচারণায় সাংবাদিক অরুণ বসুর কথা উঠে আসে। ঢাকা, ৯ অক্টোবর
স্মরণসভায় সাবেক সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের স্মৃতিচারণায় সাংবাদিক অরুণ বসুর কথা উঠে আসে। ঢাকা, ৯ অক্টোবর

স্মরণসভায় বক্তারা

শুদ্ধ বাংলা চর্চায় অরুণ বসুর মতো আন্তরিকতাসম্পন্ন মানুষ কমে গেছে

সাংবাদিক অরুণ বসুর জানাশোনার পরিধি, বাংলা ভাষার ওপর তাঁর দখল প্রথম আলো ও তার বৃহত্তর পাঠক সমাজকে সমৃদ্ধ করেছে। শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা, শুদ্ধ বাক্য লেখার বিষয়ে তাঁর মতো আগ্রহী ও আন্তরিকতাসম্পন্ন মানুষ কমে গেছে। বাংলা ভাষা ও শিল্পের প্রতি তাঁর ভালোবাসা সব সময় ছিল। অরুণ বসুর প্রয়োজনীয়তার কথা এখনো স্মরণ করা হয়। তাঁর নৈতিক শক্তিও ছিল প্রবল।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক ও প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক অরুণ বসুর স্মরণসভায় তাঁর সাবেক সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। অরুণ বসুর পছন্দের কবিতায়, গানে ও নানা স্মৃতিচারণায় তাঁকে স্মরণ করা হয়।

সভায় শিশুসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর সাবেক জ্যেষ্ঠ পাণ্ডুলিপি সম্পাদক আখতার হুসেন বলেন, অরুণ বসুর জানাশোনার যে পরিধি, বাংলা ভাষার ওপর তাঁর যা দখল, সেটা যেমন প্রথম আলোকে সমৃদ্ধ করেছে, ঠিক তেমনি প্রথম আলোর বৃহত্তর পাঠক সমাজকেও সমৃদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাপার, বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে চর্চার ব্যাপারে, শুদ্ধ বাক্য লেখার ব্যাপারে তাঁর যে আগ্রহ ও আন্তরিকতা—সে রকম মানুষ একেবারে কমে গেছে। সেখানে তিনি ছিলেন একটা অতুলনীয় চরিত্র, অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব।

অরুণ বসুর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতি তুলেন ধরে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘তাঁর (অরুণ বসু) মধ্যে থাকা সব নমনীয়তা, কমনীয়তা, কোমলতার পেছনে একটা প্রবল এবং বিরুদ্ধ প্রকাশ আমরা পেয়েছি। তাঁর এই বিরুদ্ধতার উৎস হচ্ছে একটা নৈতিক শক্তি।’

স্মরণসভায় সাংবাদিক অরুণ বসুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। ঢাকা, ৯ অক্টোবর

সাজ্জাদ শরিফ বলেন, অরুণ বসু খুব জোরালোভাবে কথা বলতেন। তাঁর সঙ্গে তর্কও হতো, প্রবল তর্ক। কিন্তু তা সহকর্মীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। বাংলা ভাষা ও শিল্পের প্রতি অরুণ বসুর ভালোবাসা সব সময় ছিল।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘অরুণদার খুবই বিখ্যাত উক্তি আমরা অনেকবার লিখেছি এবং প্রথম আলোতে অন্তত দিনে একবার বলাই হয়। উনি আমাদের শিখিয়েছিলেন—এমন চেয়ারে, এমন কথা বলো না, এমন কাজ করো না, কেউ বলে, “ছোট”। এমন চেয়ারে বসো না, কেউ বলে, “ওঠো”।’ তিনি বলেন, প্রথম আলোয় তাঁর প্রয়োজনীয়তার কথা এখনো স্মরণ করা হয়।

গণ সাহায্য সংস্থায় অরুণ বসুর সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁর সাবেক সহকর্মী বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, অরুণ বসু সবকিছুকে ঢালাওভাবে মেনে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। প্রতিবাদ করতেন।

জীবনের মাপকাঠিতে অরুণ বসুকে মাপলে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেন তাঁর আরেক সাবেক সহকর্মী জাভেদ হুসেন। তিনি বলেন, জীবনকে সহজভাবে নেওয়ার জন্য সাহস দরকার, যেটা অরুণ বসুর মধ্যে সব সময়ই ছিল।

স্মরণসভায় বাবার নানা স্মৃতি তুলে ধরেন অরুণ বসুর ছেলে মেঘমল্লার বসু। তিনি বলেন, বাবার প্রবল জীবনবোধ ছিল। তিনি বাণিজ্যিক পরিসরে ছিলেন, কিন্তু নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি। তিনি জীবন নিয়ে অনুরাগী ছিলেন। ফলে তাঁর কাছে বা সংস্পর্শে যাঁরাই এসেছেন, তাঁরা এ প্রবল জীবনবোধ পেয়েছেন।

স্মরণসভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান অরুণ বসুর সহধর্মিণী কবিতা গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘এমন একটা লোককে নিয়ে সংসার করা যে কী কষ্টের! একেবারে অনিয়মের চূড়ান্ত ছিল। ঘরছাড়া মানুষটাকে ঘরে আটকানো কঠিন ছিল।’ স্বামীকে হারানোর পর প্রথম আলো তাঁর পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কবিতা গোস্বামী।

ঘরোয়া এই আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন জাহীদ রেজা নূর, শওকত আলী, মেহেরাব উল গনি ও বিপ্লব বালা। স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন আলতাফ পারভেজ, ইভা মণ্ডল, রুপা নাহাস, তৃপ্তি বালা প্রমুখ।

অরুণ বসু ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর ৬৮ বছর বয়সে মারা যান। ১৯৯৯ সালের ১ মার্চ থেকে তিনি আমৃত্যু প্রথম আলোয় কর্মরত ছিলেন।