কুকুর লেলিয়ে হত্যা

হিমাদ্রী হত্যায় তিন আসামির ফাঁসি বহাল, দুজন খালাস

হিমাদ্রী মজুমদার
হিমাদ্রী মজুমদার

চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রী মজুমদারকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল ও অপর দুজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা তিন আসামি হলেন, জুনায়েদ আহম্মদ ওরফে রিয়াদ, জাহিদুল ইসলাম ওরফে শাওন ও মাহবুব আলী খান ওরফে ড্যানি। তাঁদের মধ্যে জুনায়েদ ও জাহিদুল পলাতক। খালাস পাওয়া দুজন হলেন, শাহাদাত হোসাইন ওরফে সাজু ও শাহ সেলিম ওরফে টিপু।

হিমাদ্রী মাদকবিরোধী সংগঠন শিকড়ের সদস্য ছিলেন। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে তাঁকে হত্যা করা হয়।

এ মামলায় ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থাকা তিন আসামির করা আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।

আদালতে সেলিমের পক্ষে আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী, শাহাদাতের পক্ষে আইনজীবী আহসান উল্লাহ ও আবদুল মতিন মণ্ডল শুনানিতে ছিলেন। মাহবুবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুনুর রশীদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ হিরো এবং পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নারগিস আক্তার।

পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হিমাদ্রীর ওপর যে কুকুর (প্রজাতির) লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা বিশ্বের দ্বিতীয় হিংস্র কুকুর বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় হাইকোর্ট তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। অপর দুজনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের একটি ভবনের পাঁচতলার ছাদে নিয়ে হিমাদ্রীকে মারধরের পর তাঁর ওপর কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। ওই বছরের ২৩ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান পাঁচলাইশের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রী।

এ ঘটনায় হিমাদ্রীর মামা অসিত কুমার দে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের আদালত রায় দেন।

রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ওই বছরই হাইকোর্টে আসে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। কারাগারে থাকা তিন আসামি পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়।