জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জকসু নির্বাচন

ম্যানুয়ালি ভোট গণনাসহ দুই দফা দাবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার পদ্ধতি নিয়ে দুই দফা দাবি উত্থাপন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল নেতারা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা এবং কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কোনো ধরনের ডিজিটাল কারচুপির সুযোগ রাখা যাবে না।

ছাত্রদলের উত্থাপিত দুটি দাবি হলো প্রথমত, প্রযুক্তিগত জটিলতা বা ডিজিটাল কারচুপির আশঙ্কা এড়াতে ব্যালট পেপারে দেওয়া ভোট প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে স্বচ্ছভাবে হাতে (ম্যানুয়ালি) গণনা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভোট গণনা শেষে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা লুকোচুরির সুযোগ বন্ধ করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রেই ঘোষণা করতে হবে এবং ফলাফলের কপি প্রার্থীদের এজেন্টদের সরবরাহ করতে হবে।

২৫ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান জানিয়েছিলেন, আসন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্তের পরই ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পাল্টা এই দাবি জানানো হলো।

সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদি হাসান (হিমেল) বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ব্যবহৃত ব্যালট, বাতিল ব্যালট ও অব্যবহৃত ব্যালটের পূর্ণাঙ্গ হিসাব স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ব্যালট নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির নজির রয়েছে। জকসু নির্বাচনে যাতে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কঠোর নজরদারি করতে হবে।

এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর কোনো পাতানো বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চান না। প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়, তবেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার রক্ষায় ছাত্রদল কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলেও তিনি সতর্ক করেন। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কোনো বিশেষ মহলের প্রভাবমুক্ত থেকে শিক্ষার্থীদের আস্থার প্রতিফলন ঘটাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ভোট গ্রহণ শেষে অনেক সময় ব্যালট পেপার যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ কারণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে দাবি করেন বক্তারা।

কমিশনের পদত্যাগ দাবি

জাতীয় ছাত্রশক্তি–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের প্রার্থীরা ফেসবুকে লাইভে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তাঁরা আসন্ন জকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ আয়োজন নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। রোববার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন।

ফেসবুকে ছড়াচ্ছে ভোটের উত্তাপ

ফেসবুকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চলছে। সরাসরি প্রচারণার সুযোগ কম থাকায় প্রার্থীরা বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভার্চ্যুয়াল মঞ্চ।

ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের ফেসবুক পেজের অনুসারী ইতিমধ্যে ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রার্থীরা হলে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন এবং দোয়া চাইছেন। প্যানেলের ভিপি প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম জানান, অনুষদ ও বিভাগের পর্যায়ে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি অনলাইনেও ইশতেহার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং ইতিমধ্যেই সাড়া পাচ্ছেন।

অন্যদিকে ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ফেসবুক পেজের অনুসারী ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং বাইরের এলাকায় নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন এবং সমর্থন চাইছেন।

ফেসবুকে প্রার্থীদের ভিডিও বার্তা, পোস্টার, স্লোগান ও লাইভ প্রচারণা নিয়মিত চোখে পড়ছে। শিক্ষার্থীরাও এসব পোস্টে সমর্থন জানাচ্ছেন, প্রশ্ন তুলছেন এবং বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ করে ‘আমরা জকসু চাই (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ)’ নামের বড় ফেসবুক গ্রুপটি এখন কার্যত অনলাইন নির্বাচনী মাঠে পরিণত হয়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন প্যানেল ও সমর্থকদের তৈরি বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে প্রচারণা, পাল্টাপাল্টি বয়ান (ন্যারেটিভ) ও আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা, সৃজনশীল উপস্থাপনা এবং সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এসব নিয়ে এবারের জকসু নির্বাচনে ফেসবুক হয়ে উঠেছে প্রচারণার একটি প্রভাবশালী প্ল্যাটফর্ম।