মানিকগঞ্জে শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি দাবিতে মানবন্ধনে হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে
মানিকগঞ্জে শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি দাবিতে মানবন্ধনে হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে

বাউলশিল্পী আবুলকে গ্রেপ্তার ও তাঁর ভক্তদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানালেন ৭৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর ভক্তদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৭৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এই হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সমাজের বিশিষ্টজনেরা এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে এই বিশিষ্টজনেরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে ‘তৌহিদি জনতা’ নামের একটি গোষ্ঠী। তারই ধারাবাহিকতায় বাউল আবুল সরকারের ভক্ত ও সমর্থকদের ওপর এই হামলা হয়েছে। এটি শুধু একদল বাউল ও তাঁদের সমর্থকদের ওপর হামলা নয়, সব নাগরিকের ওপর আঘাত। হামলাকারী ও হামলায় উসকানিদাতাদের অনেকের ছবি, নাম ও রাজনৈতিক পরিচয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ফলে হামলাকারীদের ‘মব’ বলে দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। এই চিহ্নিত গোষ্ঠীকে ছাড় দিলে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দেবে।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বহু বছর ধরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বারবার আঘাতের মুখে পড়েছে। সরকার গঠনের সময় বলা হয়েছিল, নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাউলদের ওপর হামলা, তাঁদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মিছিল, আটক থাকা আবুল সরকারের মুক্তি না পাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে সরকার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

বিবৃতিতে সারা দেশে বাউলশিল্পীদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো—মানিকগঞ্জসহ সারা দেশে বাউলশিল্পী ও তাঁদের আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা; ধর্মীয় অনুভূতির নামে উসকানি ও হামলা বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দৃশ্যমান ও ন্যায্য পদক্ষেপ নেওয়া; ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে আটক বাউলশিল্পী আবুল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করা এবং বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তদন্ত করে দ্রুত মুক্তি দেওয়া এবং দেশের বাউল, শিল্পী, লেখক, একাডেমিক, সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের কথা বলার, গান গাওয়ার ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার অন্তর্বর্তী সরকার রক্ষা করবে, তা স্পষ্টভাবে জানাবে এবং তার প্রমাণ হিসেবে বাস্তব পদক্ষেপ নেবে।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান, শিক্ষক ও লেখক ফাহমিদুল হক, আসিফ মোহাম্মদ শাহান ও সামিনা লুৎফা, স্থপতি মারজিয়া মিথিলা, আইনজীবী সারা হোসেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসবিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ, গবেষক ও লেখক মোবাশ্বার হাসান, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ, সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ প্রমুখ।