বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা। আজ শুক্রবার রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা। আজ শুক্রবার রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে

মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীর চলার পথে থাকা সংকটগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বাধা দূর করতে নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। তাঁরা আরও বলেন, পরিবার থেকে বৈষম্য দূর করা ও রাজনীতিবিদদের জেন্ডার সংবেদনশীল হিসেবে গড়ে উঠতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা রোধে কনটেন্ট বিশ্লেষণের ওপর জোর দিতে হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ‘দক্ষ সংগঠক গড়ে তুলি, সংগঠনকে সংহত করি’—এই স্লোগানের আলোকে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হয়। জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। ‘বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’, এ বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, তৃণমূল কর্মীদের ক্রমাগত কণ্ঠস্বর ধরে রাখার জন্য সংগঠনের কর্মতৎপরতা বেড়েছে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীর চলার পথে থাকা সংকটগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। স্বেচ্ছাসেবার মনোভাবকে বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, জাতীয় ও বৈশ্বিক আন্দোলনের পরম্পরায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জন্ম। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাচেতনার মধ্য দিয়েই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে। নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমানে নারীর অবস্থার কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও নারীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে এখনো কিছু বিষয় মীমাংসিত নয়।

সমাজে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো, প্রথা, আইন ও জীবনাচরণের কারণে এখনো নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, সম–অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ মসৃণ নয় বলে মন্তব্য করেন সীমা মোসলেম। তিনি বলেন, পথে থাকা বিভিন্ন বাধা মোকাবিলায় নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে কর্ম অধিবেশনে ‘নারী আন্দোলনের আগামী কর্মসূচি এবং চ্যালেঞ্জসমূহ’–এর ওপর ৬টি দলে ৫৫টি জেলা শাখার ২২৯ জন সংগঠক, তরুণী সংগঠক ও কর্মীদের অংশগ্রহণে দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় কাজ উপস্থাপন শেষে আলোচনা সভা হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ (কেয়া) বলেন, পরিবার থেকে আসা বাধা দূর করতে সমাজে নারী সংগঠকের ভূমিকা নিয়ে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, পরিবার থেকে বৈষম্য দূর করার কাজ শুরু করতে হবে। রাজনীতিবিদদের জেন্ডার সংবেদনশীল করে গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা রোধে কনটেন্ট বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মতামত প্রকাশের প্রয়োজন আছে। প্রযুক্তিকে না ঠেকিয়ে ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে। নিজেদের সক্রিয় রাখতে হবে, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে হবে এবং প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুসারে তথ্যের ব্যবহার যথাযথভাবে করতে হবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।