থাইল্যান্ডের জাতীয় পতাকা
থাইল্যান্ডের জাতীয় পতাকা

বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে

থাইল্যান্ড: পরাধীনতাকে জয় করা এক জাতির গল্প

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

বিশ্বের মানচিত্রে বিজয়ের সংজ্ঞা সব সময় যুদ্ধক্ষেত্র বা বারুদের গন্ধে সীমাবদ্ধ থাকে না। কখনো কখনো বিজয় মানে হলো হাজারো ঝড়ের মধ্যেও মাথা নত না করা। আজ ৫ ডিসেম্বর, আমাদের প্রতিবেশী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের ‘জাতীয় দিবস’। একই সঙ্গে দিনটি উদ্‌যাপিত হয় দেশটির ‘ফাদার্স ডে’ বা বাবা দিবস হিসেবেও। কারণ, ১৯২৭ সালের এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের আধুনিক ইতিহাসের রূপকার প্রয়াত রাজা ভূমিবল অতুল্যতেজ (নবম রামা)।

ডিসেম্বর মাসের বিজয়ের গল্পে থাইল্যান্ডের নাম উঠে আসে এক অনন্য কারণে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড (সাবেক নাম ‘শ্যামদেশ’) কখনোই ইউরোপীয় কোনো শক্তির উপনিবেশ ছিল না। যখন প্রতিবেশী মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া বা ভিয়েতনাম ব্রিটিশ কিংবা ফরাসি শাসনের শৃঙ্খলে বন্দী ছিল, তখন থাইল্যান্ড তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও জাতীয় ঐক্যের জোরে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। তাদের এই স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই ছিল সবচেয়ে বড় বিজয়। আর আধুনিক যুগে সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আগলে রাখার প্রতীক ছিলেন রাজা ভূমিবল।

থাইল্যান্ডের আধুনিক ইতিহাসের রূপকার রাজা ভূমিবল অতুল্যতেজ

টানা ৭০ বছর তিনি সিংহাসনে ছিলেন। থাই জনগণের কাছে রাজা ভূমিবল কেবল রাজা ছিলেন না, ছিলেন জাতির পিতা এবং ঐক্যের প্রতীক। বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক অভ্যুত্থানের সময় তিনি দেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছেন। তাঁর জন্মদিনটিকে তাই থাইল্যান্ডবাসী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উদ্‌যাপন করে।

বিশ্ব মানচিত্রে থাইল্যান্ড

আজকের দিনে ব্যাংককের রাজপথ হলুদ রঙের সাজে সেজে ওঠে। যেহেতু থাই ঐতিহ্যে সোমবারের রং হলুদ এবং রাজার জন্ম সোমবারে, তাই জনগণ হলুদ পোশাক পরে রাজার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। সন্ধ্যায় হাজারো প্রদীপ জ্বালিয়ে তারা তাদের সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের জয়গান গায়। বাংলাদেশের বিজয় দিবস যেমন আমাদের মনে করিয়ে দেয় শোষকের বিরুদ্ধে লড়াকু মানসিকতার কথা, তেমনি থাইল্যান্ডের এই দিনটি শেখায়—কৌশল, ঐক্য আর দেশপ্রেম থাকলে কোনো পরাশক্তিই একটি জাতিকে পদানত করতে পারে না।