আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

কন্যাশিশু দিবস উদ্‌যাপন

কন্যাশিশুর নিরাপত্তায় সমাজকেও কাজ করতে হবে

দেশে নারী ও কন্যাশিশুরা নানাভাবে বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়। এসবের অবসান হওয়া দরকার। কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজকেও কাজ করতে হবে। মেয়েরা সুযোগ পেলে শিক্ষিত, যোগ্য ও উপার্জনক্ষম হতে পারে।

জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে আজ বুধবার এক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। রাজধানীতে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ছিল। আজ দিবস উদ্‌যাপনের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল গেট (দোয়েল চত্বর–সংলগ্ন) থেকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। শিশু একাডেমি পর্যন্ত গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজকে কাজ করতে হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হওয়া উচিত মেয়েদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ জন্য মন্ত্রণালয় একটা কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে কন্যাশিশুদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মীদের তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে শিশুরা কোনো বিপদে পড়লে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা তাদের সহায়তা করতে পারে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন বাংলাদেশ হবে শিশুদের জন্য। আমি মনে করি, যখন মেয়েরা, আমাদের শিশুরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তখন পুরো রাষ্ট্র মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।’

জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদ্‌যাপনের কার্যক্রম শুরু হয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে

অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি বঞ্চনা ও অবহেলা চলে আসছে। এটা যেন আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে, আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে নারী ও কন্যাশিশুরা নানাভাবে বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়। বাল্যকাল থেকেই এসবের অবসান হওয়া দরকার।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ। তিনি বলেন, মেয়ে ও ছেলেরা যেন সমানতালে বেড়ে উঠতে পারে, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেহেতু মেয়েরা এখনো নানাভাবে পিছিয়ে রয়েছে, তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশেষ করে কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ রোধে সবার নজর দেওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে মহাপরিচালক কাজী গোলাম তৌসিফ বলেন, ‘আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র এখনো কন্যাশিশুদের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দিতে পারেনি। তাই কন্যাশিশুরা যাতে নিজেদের বিকশিত করতে পারে, দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে, সে জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।’

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম বলেন, ‘আমাদের সমাজে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তাতে মেয়েদের অধস্তন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। তারা শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে মূলত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায়, যার অবসান হওয়া দরকার।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহসভাপতি শাহীন আক্তার ডলি। দিবস পালন উপলক্ষে দুটি শিশু তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বক্তব্য দেয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘স্বপ্ন গড়ি, সাহসে লড়ি’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। শেষভাগে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২৫ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘কন্যাশিশু-২০’ বই ও পোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।