সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে ‘গণভোট’ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান থেকে ব্যবহারকারীরা ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ লেখা পোস্টার, ব্যানার ও স্ট্যাটাস শেয়ার করে ভার্চ্যুয়াল প্রচারণায় নেমেছেন। কেউ কেউ বিষয়টিকে অনেকটা মজা হিসেবে নিয়েছেন। সব মিলে অনলাইনে শুরু হয়েছে একধরনের ‘হ্যাঁ’, ‘না’ প্রতিযোগিতা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দেয়। তাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন এই গণভোট করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
এরপর ফেসবুকে ‘গণভোট’ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ‘গণভোট’ শব্দটি ফেসবুকে সার্চ করলে প্রথমেই আসে ‘Voice of Shibir’ নামের একটি পেজ। সেখানে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রশ্নে হ্যা বলুন’ লেখা পোস্টার প্রচার করা হয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর ঐক্যজোট “না” ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যদিকে দেখবেন, জুলাইয়ের বাকি দলগুলো নামবে “হ্যাঁ”-এর পক্ষে।...শেষ মুহূর্তে হলেও বিএনপি “হ্যাঁ”-এর পক্ষে আসবে। আসবে মানে আসতে বাধ্য হবে। জুলাইয়ের প্রশ্নে “হ্যাঁ” চলবে। “হ্যাঁ”–কে “হ্যাঁ” বলুন।’
‘গণভোটে না’ লিখে সার্চ করলে দেখা যায়, বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ‘না!’ লেখা পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। একই পোস্ট বিএনপি ও ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মীর আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
এ ধরনের পোস্টের স্ক্রিনশট, রিপোস্ট ও মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এসব পোস্টে মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ ‘হ্যাঁ’, কেউ কেউ ‘না’–এর পক্ষে সমর্থন দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার এমন আলোচনার বিষয়বস্তু বুঝতে না পেরে ‘গণভোট কী?’; ‘কেন গণভোট’—এমন মন্তব্য করছেন।
মূলত গণভোট ইস্যুতে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করা হোক। জামায়াতের চাওয়া নভেম্বরে গণভোট হোক। আর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, গণভোট কি আগে হবে, নাকি পরে হবে, এটা জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির মধ্যে একটা কুতর্ক। এই কুতর্কের মধ্যে এনসিপি জড়াবে না। দুই দলেরই উচিত এসব বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ ভোটের মধ্য দিয়ে। এবার যদি তারা ‘না’ ভোটে অনড় থাকে, তাহলে দলটির মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। তারা যেন ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের কবর রচনা না করে।
এদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির দাবি জানান। এই আদেশ জারির পর গণভোটের আয়োজন করার দাবি তোলেন।
অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সময়স্বল্পতা, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ—এই কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনা প্রসূত।’
এদিকে এনসিপির কোনো কোনো নেতা ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবীন তাঁর অফিশিয়াল ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘জুলাই সনদ যাতে বাস্তবায়ন না হয়, গণভোটে যাতে “না ভোট” জিতে...যারা তীব্রভাবে এটা চাইছে, যারা তীব্রভাবে “না ভোটের”পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, তারা আদৌতে “হ্যাঁ ভোট”কে পোক্ত করতেসে। কারণ, গণমানুষ নীরবে বিপ্লব ঘটায় দিবে।...’
গণভোট নিয়ে এই হ্যাঁ-না পোস্টগুলোর কারণে ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। এরই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গণভোট কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।
গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা থাকব। আমরা সহায়তা করার জন্য থাকব।...দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’