রাজধানীর বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ এনার্জি কনফারেন্স ২০২৫ আয়োজন করা হয়। ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
রাজধানীর বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ এনার্জি কনফারেন্স ২০২৫ আয়োজন করা হয়। ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

উপায় থাকলে এলএনজি আমদানি বন্ধ করা হতো: জ্বালানি উপদেষ্টা

কোনো উপায় নেই বলেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে, জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা পছন্দের ভিত্তিতে করা নয়, উপায় নেই দেখেই করা। উপায় থাকলে এলএনজি আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করা হতো। হঠাৎ করে এলএনজি বন্ধ করলে দেশ অন্ধকার হয়ে যাবে, শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে।

বাংলাদেশ এনার্জি কনফারেন্স ২০২৫-এর শেষ দিনের এক অধিবেশনে এ কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা। রাজধানীর বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন আজ সোমবার শেষ হয়েছে। শেষ অধিবেশনে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, গ‍্যাসের চাহিদা আছে। যত কম দামে আমদানি করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জ্বালানি রূপান্তরে নীতিমালা করা হয়েছে।

তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন ফাওজুল কবির। তিনি বলেন, সরকার জ্বালানি রূপান্তর চায়। দুর্নীতিযুক্ত একটা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় যেতে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বড় বাধা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যাঁরা আছেন, তাঁরা। জীবাশ্ম জ্বালানি না থাকলে তাঁদের লেনদেন থাকবে না। কায়েমি স্বার্থের ব্যবসায়ীরা এবং তাঁদের থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের যাঁরা সুবিধা পান, তাঁরা প্রধান অন্তরায়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, রাতারাতি চাইলেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়ানো যাবে না। গ্রিডের স্ট্যাবিলিটি বজায় রাখতে হবে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে রপ্তানিমুখী কারখানার সঙ্গে বসতে হবে। দেশে চার হাজার কারখানা আছে। তারা সবাই ৫ মেগাওয়াট করে যোগ করলে ২০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা হয়ে যাবে।

নীতিনির্ধারক, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী, নারী, আদিবাসী, শ্রমজীবী, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী ও জ্বালানি প্রকল্পের ভুক্তভোগীসহ ২৫০ জন প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে অংশ নেন। ১৮টি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলনে ৩টি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ও ১০টি কৌশলগত অধিবেশনে আলোচনা করে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। আজ শেষ অধিবেশনে ২২ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বেসরকারি সংস্থা ক্লিনের প্রধান নির্বাহী এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নকর্ম জোটের (বিডব্লিউজিইডি) সদস্যসচিব হাসান মেহেদী।

২৭টি বেসরকারি সংস্থা ও ১৬ ব্যক্তি সদস্য মিলে বিডব্লিউজিইডি গঠিত। ২০২৩ সাল থেকে জ্বালানি সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। এবার তৃতীয়বারের মতো এটি পালিত হচ্ছে। বিডব্লিউজিইডির সঙ্গে যৌথভাবে ১৮টি সংগঠন মিলে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এতে জলবায়ু সংকট ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় অবিলম্বে একটি বাস্তবভিত্তিক জাতীয় জ্বালানিনীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ, পরিবেশ ও জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা।

সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ সালের তুলনায় ২০২৪-২৫ সালে এলএনজি আমদানি ১৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে এলএনজি আমদানির খরচ প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। এলএনজি খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এলএনজি আমদানি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। নতুন করে কোনো এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ না করার দাবি জানায় তারা। শিল্প ও বাণিজ্য খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ সবুজ জ্বালানি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। আগামী বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বিদ্যুৎ খাতের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানানো হয় ঘোষণাপত্রে।

এর আগে আজ সকালের অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ১৩ দফা দাবিসংবলিত একটি নাগরিক ইশতেহার উপস্থাপন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ইশতেহারটি পাঠ করেন বিডব্লিউজিইডির নির্বাহী সদস্য মনোয়ার মোস্তাফা।