বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ শুরু

শিশুর মায়ের দুধ পানের হার কমেছে ১০%

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মা সন্তানকে দুধ পান করাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন বাধা নেই।

শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক বিকাশ, অপুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধে মায়ের দুধের বিকল্প নেই।
শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক বিকাশ, অপুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধে মায়ের দুধের বিকল্প নেই।

শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক বিকাশ, অপুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু দেশে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর হারে বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। এ হার ১০ শতাংশ কমে এক যুগ আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০২২–এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

পাশাপাশি ডেঙ্গু ছোঁয়াচে না হলেও সংক্রামক রোগ হওয়ায় আক্রান্ত মা তাঁর সন্তানকে দুধ পান করাতে পারবেন কি না, এ নিয়ে তাঁদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে দুধ পানে কোনো বাধা নেই।

বিডিএইচএস ২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে জন্মের পর থেকে পাঁচ মাস বয়সের শিশুদের শুধু বুকের দুধ পানের হার এখন ৫৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে এ হার ছিল ৬৫ শতাংশ। এর আগে ২০১৪ সালে এ হার ৫৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ৬৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৪৩ শতাংশ এবং ২০০৪ সালে ৪২ শতাংশ ছিল।

যে সময় জরিপ হয়েছে, তখন করোনা মহামারি আকারে ছিল। ধারণা করা যায়, ওই সময় মাঠপর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম কম থাকায় মাতৃদুগ্ধ পানের হার কমেছে। এ ছাড়া কর্মজীবী মায়ের সংখ্যা বাড়ছে।
সুপ্তা চৌধুরী, উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক, জাতীয় পুষ্টি সেবা

এ অবস্থায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহকে সামনে রেখে শিশুর মায়ের দুধ পানের হার বাড়ানোর জন্য সচেতনতা ও কর্মজীবী মায়েদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিতে বলছেন পুষ্টিবিদেরা।

প্রতিবছর ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে দেশে প্রতিবছর এ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ২০১০ সাল থেকে তা জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। এবার এ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘কর্মজীবী মা-বাবার সহায়ক পরিবেশ গড়ি, মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করি।’

শিশুর মায়ের দুধ পানের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় পুষ্টি সেবার উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক সুপ্তা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, যে সময় জরিপ হয়েছে, তখন করোনা মহামারি আকারে ছিল। ধারণা করা যায়, ওই সময় মাঠপর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম কম থাকায় মাতৃদুগ্ধ পানের হার কমেছে। এ ছাড়া কর্মজীবী মায়ের সংখ্যা বাড়ছে। সব জায়গায় দুধ পান করানোর স্থান, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রসহ বাড়িতেও সহায়ক পরিবেশ না থাকায় অনেক মা সন্তানকে টানা ছয় মাস দুধ পান করাতে পারছেন না।

বিডিএইচএস ২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে জন্মের পর থেকে পাঁচ মাস বয়সের শিশুদের শুধু বুকের দুধ পানের হার এখন ৫৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে এ হার ছিল ৬৫ শতাংশ।

ঘাটতি রয়েছে তথ্যের

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফারহানা ইয়াছমিনের ছোট মেয়ের বয়স এখন সাড়ে ছয় মাস। একজন সচেতন মা হিসেবে তিনি পুরো ছয় মাস শিশুকে শুধু বুকের দুধ পান করিয়েছেন। ফারহানা বলেন, অফিসে যাওয়া শুরু করার পর বুকের দুধ ফ্রিজে রেখে গেছেন। বুকের দুধ চুলা বা ওভেনে গরম করা যায় না বলে কুসুম গরম পানির বাটিতে দুধের পাত্র বসিয়ে উষ্ণ করে পরিবারের সদস্যরা মেয়েকে সেই দুধ পান করিয়েছেন। তবে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত মা শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন কি না, তা তিনি জানেন না। এ নিয়ে প্রচার হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

আরেকজন কর্মজীবী মা ফারহানা হক প্রথম আলোকে জানান, চাকরির প্রয়োজনে তাঁকে সাত মাস বয়সী মেয়েকে রেখে বাইরে যেতে হয়। মেয়েকে বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা দুধ পান করান। মায়ের দুধ সন্তানের জন্য কতটা উপকারী, এটা জানেন বলে তাঁর আফসোসের মাত্রা বেশি। এর মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর উদ্বেগ কাজ করছে। ফারহানা বললেন, ‘ডেঙ্গুর সময়ে করণীয় নিয়ে বেশি বেশি তথ্য প্রচার হওয়া দরকার।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মাকে যা করতে হবে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একজন মা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে সন্তানকে দুধ পান করাতে পারবেন। তিনি যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান, তাহলে তো দুধ পান করানোর মতো অবস্থায় থাকবেন না। অথবা আক্রান্ত অবস্থায় মাকে যদি এমন কোনো ওষুধ খেতে হয় যা সন্তানের মধ্যে ছড়াতে পারে, তাহলে দুধ পান করানো যাবে না। অন্তঃসত্ত্বা মাকে এ সময়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জ্বরের ভাব দেখা দিলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গু হলে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার তিন-চার দিন পর শরীর খারাপ হওয়া শুরু করে বলে সর্বোচ্চ সতর্কতা ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, এই সময়ে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একটি ওষুধও খাওয়া যাবে না।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন জানিয়ে তথ্য প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পুষ্টি সেবা বিষয়টি দেখছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। অধিদপ্তর সবার জন্য প্রযোজ্য একটি বার্তা তৈরি করে দেবে, সেটি প্রত্যেকে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে নিজেদের মতো প্রচার করবেন।