
জঙ্গি ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের তকমা লাগিয়ে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠন। মিথ্যাচার, গুজব ও অশুভ তৎপরতার মাধ্যমে দেশের আবহমানকালের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক সুসম্পর্ক বিনষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর স্বামীবাগে ইসকন বাংলাদেশের আশ্রমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী কয়েকটি সংগঠন যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, ইসকন একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও মানবকল্যাণমূলক আধ্যাত্মিক সংস্থা। যুগ যুগ ধরে আমরা কেবল শান্তি, অহিংসা ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা প্রচার করে আসছি। দুঃখজনকভাবে আমাদের বিরুদ্ধে যা ছড়ানো হচ্ছে, সমস্ত অভিযোগই সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মাচারী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ইসকন সব ধর্ম ও মতপথের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল। যুগ যুগ ধরে শুধু শান্তি, অহিংসা, মানবসেবা ও ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা প্রচারে নিবেদিত। কোনো প্রকার সহিংসতা, প্রতিহিংসা বা ঘৃণাকে কখনো সমর্থন করে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইসকনকে জঙ্গি ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের তকমা লাগিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মাচারী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ইসকন সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া দেয়াললিখন, প্রচারপত্র বিরতণ এবং প্রতিনিয়ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজপথে বিক্ষোভ-মিছিলসহ নানাভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে ইসকন ভক্তসহ হিন্দুদের হত্যা এবং প্রতিনিয়ত মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসকন ভক্তসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সামাজিকভাবে হেনস্তার পাশাপাশি তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে অপতৎপরতায় জড়িত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া; দেশের সব মন্দির, মঠ, আশ্রমসহ সব সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করে সব ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও উসকানিমূলক প্রচারণা প্রতিরোধে কঠোর ও নিবিড় পর্যবেক্ষণব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে ইসকনের সহসভাপতি ভক্তি বিনয় স্বামী মহারাজ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সভাপতি হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন সরকার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জে এল ভৌমিক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মনীন্দ্র কুমার নাথ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় মধু উপস্থিত ছিলেন।