বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বক্তব্য দেন। ঢাকা। ২৩ আগস্ট
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বক্তব্য দেন। ঢাকা। ২৩ আগস্ট

বার কাউন্সিলের বর্ধিত সভা

কমিউনিটির মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

আইনজীবীদের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। যদি আমরা সেটা পারি, আমরা শ্রদ্ধাবোধ ফিরিয়ে আনতে পারব। আমরা আগামী বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিতে পারব।’

আজ শনিবার চলতি বছরের বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল এ কথা বলেন।

বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যদি আমরা আমাদের নিজেদের অপরাধবোধকে ঢাকার চেষ্টা করি, যদি একজন আইনজীবী দেখা যায় ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন, আমরা তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করি; একজন আইনজীবী নাবালক দুই শিশুকে কাজের মেয়ে হিসেবে এনে দিনের পর দিন নির্যাতন করছেন—সে বিষয়ে যদি পদক্ষেপ না নিতে পারি, তাহলে আমাদের সমস্ত প্রত্যাশা ও অর্জন ব্যর্থ হবে। আমরা সেই পথ থেকে…আইনি পথে ফিরতে চাই।’

বার কাউন্সিলের মাল্টিপারপাস হলরুমে সকাল থেকে ওই বর্ধিত সভা শুরু হয়, চলে বিকেল পর্যন্ত। বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুসের সঞ্চালনায় প্রথমার্ধে সভায় কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ এস এম বদরুল আনোয়ার এবং বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিরা বক্তব্য দেন। সভায় বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অপরাধ করে থাকলে সোচ্চার হতে হবে

বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যে দলই করি না কেন, আমরা যে মতেই থাকি না কেন, যে পথেই থাকি না কেন, আমরা চাই, আপনারা আপনার দলের আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ শিখরে সর্বোচ্চ জায়গায় যাতে অধিষ্ঠিত হন, সে রকম একটি পরিবেশ চাই। এই পরিবেশ নিশ্চিত করতে গেলে আমাদেরও কিছু ভূমিকা রাখতে হবে। প্রথম ভূমিকা হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমাদের নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। যদি আমরা সেটা পারি, আমরা শ্রদ্ধাবোধ ফিরিয়ে আনতে পারব। আমরা আগামী বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিতে পারব।’

বার কাউন্সিলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে বার কাউন্সিলের পরীক্ষা নিয়মিতকরণসহ প্রতিষ্ঠানটির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এ ছাড়া স্থিতিশীল বেনাভোলেন্ট ফান্ড গঠনে প্রদত্ত কোর্ট ফির ২০ শতাংশ বেনাভোলেন্ট ফান্ডে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ; আইন পেশার মান উন্নয়নে আইনজীবীদের ভূমিকা এবং আইনজীবীদের সুরক্ষাসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শও ছিল আজকের বর্ধিত সভায়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ৫ আগস্ট যে বিপ্লব হয়েছে, যে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই অভ্যুত্থান ধরে রাখা প্রয়োজন। আর সেই অভ্যুত্থানের ফসল তখনই ঘরে তোলা যাবে, যদি আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ থাকে।

আইনজীবী সুরক্ষা আইন হওয়া দরকার

শুরুতে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, রাজনীতি যার যার, বার কাউন্সিল সবার। আইনজীবীদের পেনশন পাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আইনজীবীরা বাংলাদেশে একটি বড় পেশাজীবী। আইনজীবীরা রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আইনজীবীরা কিছুই পান না। তিনি বলেন, ‘কোর্ট ফি থেকে দেওয়া হয়, ওকালতনামায় কোর্ট ফি দিই, মামলা দায়ের করতে কোর্ট ফি দিই।…এত কিছু দিই আমরা কিন্তু সরকারের কাছ থেকে একটি পয়সাও পাই না। যে টাকা আমরা সরকারকে দিই, তার অন্তত ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে পারি, তাহলে আমরা বেনাভোলেন্ট ফান্ড আরও দ্বিগুণ করতে পারব। ২০ শতাংশ আমরা চেয়েছি, এটি ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।…এটা আমরা পাব। এটা বলেছি, যদি আমাদের দেওয়া না হয়, আমাদের এক লক্ষ আইনজীবী আছেন, প্রয়োজন হলে আইনজীবীরা সচিবালয় ঘেরাও করে হলেও এই টাকা আদায় করব।’

আইনজীবীদের জন্য কোনো সুরক্ষা আইন নেই উল্লেখ করে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘যেকোনো সময় আইনজীবীদের গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ সরকারি কর্মচারীদের বেলায় অনুমতি লাগবে। আমাদেরও সে রকম একটা আইন হওয়া দরকার। সেই আইন করার দিকেও এগিয়ে যেতে হবে।’