দেয়ালে গ্রাফিতি
দেয়ালে গ্রাফিতি

আলতাফ পারভেজের লেখা

প্রত্যাশা কি মেটাতে পারছেন রাজনীতিবিদেরা

২০২৪ সালের জুলাইয়ের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামের ধারা ছিল একাধিক। কিছু দল চাইছিল সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্য অনেকে লড়ছিল পেশাজীবীদের দাবি নিয়ে এবং সরকারের নানান সামাজিক জুলুমের বিরুদ্ধে। কেউই খুব একটা সফল ছিল না; বরং সরকার ক্রমাগত দুঃশাসকে পরিণত হয়েছিল। পাহাড়সম সেই প্রতিপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পেরেছিল অদলীয় তরুণ-তরুণী ও শ্রমজীবী মানুষেরা।

এ অসাধ্যসাধনে রাজনৈতিক কর্মীরাও যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরও অংশগ্রহণ ছিল। শহীদদের মধ্যেও দলীয় কর্মীরা আছেন; কিন্তু গত ১২ মাসে রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যুত্থানের দার্শনিক চেতনা ও রাজনৈতিক চাওয়ার সঙ্গে কতটা একাত্ম হতে পারল? অভ্যুত্থানের চাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে কতটা দলীয় কাঠামোর সংস্কার করলেন রাজনীতিবিদেরা? অভ্যুত্থানের কর্মীদের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন সারাতে কতটা সময় দিলেন? 

অভ্যুত্থান-উৎসবের বর্ষপূর্তিকালে এসব প্রশ্নই কেবল মনে আসছে।

অভ্যুত্থানকর্মীদের জন্য দলগুলো কী করেছে

গত বছর ৩৬ দিন ধরে যে মানুষগুলো রক্তের সাগর পাড়ি দিয়েছেন, তাঁরা ৩৭ জুলাই থেকে প্রতিদিন ট্রমার মধ্যেও আছেন। তাঁরা অনেকে এখন প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভোগেন। মারমুখী পুলিশ দল দেখলে আঁতকে ওঠেন। রক্ষী দল আর পেটোয়া বাহিনীকে শিশু-কিশোর-নারীদের নির্যাতন করতে দেখেছেন তাঁরা। পরিচিতজনকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন। ইচ্ছা সত্ত্বেও অনেককে হাত বাড়িয়ে রক্ষা করতে পারেননি। গণ–অভ্যুত্থানের এই কর্মিদলকে দিনে-রাতে-ঘুমে-জাগরণে দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে। এ রকম শত শত মানুষের শরীরে এখনো ‘পেলেট’(ছররা গুলি)।

সমস্যা তাঁদের অন্যদিকেও। আন্দোলনের কোনো কোনো কর্মী যখন ক্ষমতাধরদের কাছাকাছি থাকতে পারার সুযোগে চাঁদাবাজিতে ধরা পড়েন, বহু ধরনের অপকর্ম ও প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকায় তাঁদের পাওয়া যায়, তখনো অভ্যুত্থানে যুক্ত থাকা সাধারণ কর্মীরা ট্রমায় মুষড়ে পড়েন। 

দূরদূরান্তের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো বিহ্বল হয়ে আছেন তাঁদের প্রতি ক্ষমতাকেন্দ্রের অবজ্ঞা ও উদাসীনতা দেখে। 

গত ১২ মাসে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এ রকম মানুষদের জন্য মোটাদাগে কিছু করেছে কি? দলীয় গণ্ডির বড় বড় সমাবেশের বাইরে এসে গুটিয়ে যাওয়া সাধারণ ‘জুলাই যোদ্ধা’দের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলাকে দায়িত্ব মনে করেছে কি?

জেলা শহরগুলোর সেই মেয়েদের কথা তো কেউই শোনেনি—যাঁরা সামাজিক সব বাধা অগ্রাহ্য করে সতীর্থ ছেলেদের পাশে ব্যারিকেড গড়তে নেমেছিলেন এবং ‘৩৭ জুলাই’ থেকে বোবা চোখে কেবল সবার নির্বাচনী প্রস্তুতি (!) দেখছেন। আজকের অভ্যুত্থানপূর্তি-উৎসবে কতজন আছেন তাঁরা?
আলতাফ পারভেজ: গবেষক; রাজনীতি বিশ্লেষক

জেলা শহরগুলোর সেই মেয়েদের কথা তো কেউই শোনেনি—যাঁরা সামাজিক সব বাধা অগ্রাহ্য করে সতীর্থ ছেলেদের পাশে ব্যারিকেড গড়তে নেমেছিলেন এবং ‘৩৭ জুলাই’ থেকে বোবা চোখে কেবল সবার নির্বাচনী প্রস্তুতি (!) দেখছেন। আজকের অভ্যুত্থানপূর্তি-উৎসবে কতজন আছেন তাঁরা?

রাজনীতিবিদেরা মাইক পেলে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বলেন। কিন্তু সেই যুদ্ধের তরুণ আত্মাগুলো যে স্থায়ী বিষাদ ও অবসাদের শিকার, সে খবর রাজনৈতিক দপ্তরগুলো পর্যন্ত কতটা এল?

পুলিশ বাহিনীর অভ্যুত্থানকালীন সদস্যদের নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবা দরকার। চব্বিশে সেখানকার কর্মীরা যে বহুমুখী অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন এবং তাঁদের সঙ্গে জনতার সম্পর্কে যে জটিল অবস্থা তৈরি হলো, তাঁকে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় আনাও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ থাকল। 

এই উভয় দিকের ‘পোস্ট–ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’ অতিক্রম করতে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা কী করল? ‘মুক্তিযুদ্ধ’ কেবল নির্বাচনের প্রস্তুতিতে থেমে গেলে সেটি হতাশার জন্ম দিতে বাধ্য।

গত ১২ মাসে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এ রকম মানুষদের জন্য মোটাদাগে কিছু করেছে কি? দলীয় গণ্ডির বড় বড় সমাবেশের বাইরে এসে গুটিয়ে যাওয়া সাধারণ ‘জুলাই যোদ্ধা’দের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলাকে দায়িত্ব মনে করেছে কি?

অভ্যুত্থানের আদর্শ-উদ্দেশ্য কে বাঁচাবে

গণ–অভ্যুত্থানকর্মীদের সঙ্গে নতুন ধারায় যোগাযোগের মতোই রাজনৈতিক দলগুলোর সংগঠকদের গত ১২ মাসে প্রধান আরেক দায় ছিল ৩৬ জুলাইয়ের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে নিজেদের অভ্যাস, উদ্দেশ্য ও দলীয় রাজনীতির প্রয়োজনীয় বদল। সে রকম ঘটার আভাস আছে কি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে?

আমাদের মূলধারার জ্যেষ্ঠ সক্রিয় রাজনীতিবিদেরা প্রায় সবাই বিগত দেড় দশকে অনেক রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন; কিন্তু এ–ও সত্য, তাঁদের আরাধ্য কাজ সফল করে দিয়েছে চব্বিশের তারুণ্য। কোনো রাজনৈতিক দল গত এক বছর সেসব তরুণের দলীয় নেতৃত্বের আসন ছেড়ে দিল কি? কিংবা বড় সংখ্যায় তাঁদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে কি না? নিজ নিজ দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পাল্টালেন কতটা তাঁরা? কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোগুলোর একাংশ যোগ্য তরুণদের হাতে ছেড়ে দিতে সমস্যা কোথায়?

বিএনপি ‘৩১ দফা’র কথা বলছে। অন্যান্য দলও যার যার এত দিনের ইশতেহার আঁকড়ে আছে। ‘৩৬ জুলাই’য়ের আগে-পরের বাংলাদেশ যে অনেকখানি আলাদা, সেটি বোঝার প্রবল ঘাটতি রয়েছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। অথচ এ সময়ের ‘এক দফা’টা বোঝা জরুরি। যে এক দফার মূলকথা—বাংলাদেশ আর আগের মতো শাসিত হতে চায় না।

একাত্তরের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা চব্বিশ। একাত্তর যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার আমূল বদলে দিয়েছিল, চব্বিশেরও তা–ই করার কথা। গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রতিটি দল সম্মেলন ডেকে নিজ নিজ ঘোষণাপত্র না পাল্টালে কীভাবে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে তারুণ্য তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারে?

বিএনপি ‘৩১ দফা’র কথা বলছে। অন্যান্য দলও যার যার এত দিনের ইশতেহার আঁকড়ে আছে। ‘৩৬ জুলাই’য়ের আগে-পরের বাংলাদেশ যে অনেকখানি আলাদা, সেটি বোঝার প্রবল ঘাটতি রয়েছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। অথচ এ সময়ের ‘এক দফা’টা বোঝা জরুরি। যে এক দফার মূলকথা—বাংলাদেশ আর আগের মতো শাসিত হতে চায় না।

তরুণসমাজের মধ্যে আধুনিক সুশাসনের বিশাল ক্ষুধা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দফাগুলোতে অনেক কিছু থাকলেও নতুন বাংলাদেশের ৫ কোটি ক্ষুধার অতৃপ্তি দূর করতে পারছে না। এমনকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সনদও নয়। 

তারপরও গণ–অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় বর্ষের প্রধান আকর্ষণ হবে নির্বাচন। নির্বাচন জরুরি এবং সেটি এখনই; কিন্তু কেবল একটি নির্বাচনের জন্য তরুণেরা, শ্রমজীবীরা প্রাণ দেননি। তাঁরা ক্ষমতা বদলের চেয়েও বেশি কিছু চাইছেন। সেই গণবার্তা বুঝতে ব্যর্থ হলে এই রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আগামী প্রজন্ম কী করবে? 

এক বছর আগের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিরা তো কেবল ক্ষমতাবদলের সিঁড়ি হতে চাননি এবং চান না! তাঁদের কীভাবে রাজনীতিবিদেরা আশ্বস্ত করবেন? সে রকম রাজনৈতিক প্রস্তাব দেখা যাচ্ছে না।

কেবল অভ্যুত্থানকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সংলাপের ঘাটতিই নয়, গত এক বছরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব মব-সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের লাগাতার ঘটনার মোকাবিলায়ও যথেষ্ট কিছু করেননি। নারী অধিকারবিরোধী সমাবেশে ছাত্রনেতাদের কয়েকজনের সংহতিমূলক উপস্থিতি অবাক করেছে। আবার সংসদের নারী আসনে সরাসরি ভোটের দাবিতে অন্য দলগুলোর অরাজিও হতাশ করেছে।

এক বছর আগের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিরা তো কেবল ক্ষমতাবদলের সিঁড়ি হতে চাননি এবং চান না! তাঁদের কীভাবে রাজনীতিবিদেরা আশ্বস্ত করবেন? সে রকম রাজনৈতিক প্রস্তাব দেখা যাচ্ছে না।

রাঙামাটি থেকে গঙ্গাচড়া পর্যন্ত ১২ মাস ধরে একের পর এক পাহাড় ও সমতলের অবাঙালি কিংবা অমুসলমানদের ওপর ক্রমাগত যেসব অন্যায় হয়েছে, সেটি রুখতে সরকারের ব্যর্থতাকে পুঁজি করতেই যেন বড় রাজনৈতিক দলগুলো অপেক্ষা করে আছে। বিএনপি, জাপা ও জামায়াতের সক্রিয় প্রতিরোধ থাকলে এসব অনাচার হতে পারত না বলেই মানুষের বিশ্বাস। এসব বিষয়ে তাদের সচেতন নিষ্ক্রিয়তার বিপরীতে নিষিদ্ধ অনেক রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পতাকা উড়িয়ে ঘন ঘন সরব দেখা গেল কয় মাসে। মাঠে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তারা পুরোনো লুকানো-চাপানো ইমেজ ভেঙে বেশ এগিয়েছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনীতির নজরকাড়া এক উপাদান ছিল এটি।

সংস্কার প্রশ্নে সামান্য প্রাপ্তি

‘ঐকমত্য কমিশন’–এর লাইভ সম্প্রচার দেখে প্রায়ই মনে হয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কারের দু–চারটা ভাঙতি পয়সা যেন করুণা করে রাজনীতিবিদরা তরুণদলকে দিচ্ছেন। 

প্রায় ৫৫ বছর দেশ তো বিএনপি-লীগ-জাপা-জামায়াতই নানান আদলে শাসন করল। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের কোনো মৌলিক সংস্কার কি এসব দল করেছে? ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের গত দিনগুলোর টানাপোড়েনে যেন সেই না-পাওয়া অতীতের কথা জানায়। 

প্রশাসন, সংসদ, পুলিশ, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি বিষয়ে কী ধরনের সংস্কার লাগবে, তার সারকথা ‘৩৭ জুলাই’য়ের পরের দিনগুলোতে রক্ত দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর জবাবদিহি বাড়ানোর দাবি ছিল মানুষের। থানা, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস, ভূমি অফিস, কোর্ট ইত্যাদি জায়গায় কাজের ধরনে পরিবর্তন চাওয়া হয়েছিল; কিন্তু রাজনীতিবিদেরা প্রশাসন ও পুলিশি ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার নিয়ে, গুম-খুনে যুক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহির বিষয়ে যৌথ কার্যকর পদক্ষেপ নিলেন কই?

‘ঐকমত্য কমিশন’–এর লাইভ সম্প্রচার দেখে প্রায়ই মনে হয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কারের দু–চারটা ভাঙতি পয়সা যেন করুণা করে রাজনীতিবিদরা তরুণদলকে দিচ্ছেন। 

১৭৯২ সালে কর্নওয়ালিস যে ‘দারোগাব্যবস্থা’র গোড়াপত্তন করেন, সেটি মূলত ক্ষমতার পাহারাদার হিসেবে এবং বলপ্রয়োগের জন্য। গণ–অভ্যুত্থানে রক্ষী দলের বিগত ভূমিকার পরও কর্নওয়ালিস মডেলের সংস্কার না করা হলে ভবিষ্যৎ কি ভিন্ন হবে? পাশাপাশি, কেন আমরা সে ব্যবস্থা রেখে দেব, যেখানে বিচারপ্রার্থীরা মাঝখানের বাধা ডিঙিয়ে সরাসরি বিচারকের দ্বারস্থ হতে পারে না। এসব বিষয়ে জুলাই সনদে সমাধান কিছু থাকবে কি না?

বড় দলগুলোর আসন কমে যাবে বলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থাও আটকে গেল। সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা হলে বিভিন্ন আদর্শের ছোট সব দল সংসদীয় রাজনীতিতে সমন্বিত হতো। জাতীয় রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অবস্থা তৈরি হতো তাতে; কিন্তু ঘটছে উল্টোটা।

রাজনীতিবিদেরা কেউ কেউ বলছেন, দেশে দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটছে; কিন্তু কেন এটা ঘটছে, এর সঙ্গে ভূরাজনীতির সংযোগ কতটা—সেসব নিয়ে তাঁদের দিকনির্দেশনা কোথায়? আর এ রকম উদাসীনতার বিপদ সম্পর্কে ধর্ম-বর্ণ-বয়সনির্বিশেষে পরিবর্তনবাদী মানুষেরা বিকল্প কী ভাবছেন? দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো?

গত আগস্টের ঐক্য ধরে রাখা তো দূরের বিষয়; বরং রাজনৈতিক কর্মীদের চলমান কথার যুদ্ধ নির্বাচনকালে লাঠি-ছুরির সংঘাতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা বাড়াচ্ছে সমাজে। একাত্তর ও চব্বিশ বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজে যে গভীর লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছে, তার দুই পাশের মানুষকে বিচার-আচার শেষে ঘৃণা-বিদ্বেষ-প্রতিশোধের চক্র থেকে বের করে কীভাবে জাতীয়ভাবে কাছাকাছি রাখা যাবে, সে-ই দুরূহ কাজটি নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলো গভীরভাবে ভাবছে বলে মনে হয়নি। 

মানবিক করিডর, ভারতীয় পুশ ইন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের মতো বিষয়গুলোও গত এক বছর সরকার একা একা মোকাবিলা করেছে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব অবস্থান কী এবং ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদেরা সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্তর্জাতিক যুদ্ধে কী অবস্থান নেবে সে বিষয়ে খোলামেলা বলছেন না।

অথচ ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে এসে গেছে ঠান্ডাযুদ্ধের ঝোড়ো হাওয়া। অসহায়ের মতো তাতে বলি হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারত, আত্মস্বার্থে দূরদর্শী রাজনীতি। রাজনীতিবিদেরা কেউ কেউ বলছেন, দেশে দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটছে; কিন্তু কেন এটা ঘটছে, এর সঙ্গে ভূরাজনীতির সংযোগ কতটা—সেসব নিয়ে তাঁদের দিকনির্দেশনা কোথায়? আর এ রকম উদাসীনতার বিপদ সম্পর্কে ধর্ম-বর্ণ-বয়সনির্বিশেষে পরিবর্তনবাদী মানুষেরা বিকল্প কী ভাবছেন? দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো?

আলতাফ পারভেজ: গবেষক; রাজনীতি বিশ্লেষক