
একটা সময় টিকাটুলি ছিল পুরান ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা। সেই টিকাটুলির অভয় দাস লেনে ছিল বনেদি ব্যবসায়ী সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর এক সুরম্য বাড়ি, নাম ‘তারাবাগ’। ওই বাড়িতেই ১৯৫৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জন্ম নিয়েছিলেন সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। মায়ের নাম সৈয়দা রাজিয়া সুলতানা। এই রোকসানাই জীবনে অনেক চড়াই–উতরাই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট।
কানিজ ফাতেমা রোকসানার ডাকনাম ‘তিতলী’। তিতলী অর্থ ‘প্রজাপতি’। ডাকনাম তিতলী হলেও ভাইবোনেরা আদর করে তাঁকে ‘লিটল আপা’ ডাকত। অন্যদিকে তাঁর বড় বোন সৈয়দা আফসানাকে ডাকত ‘বিগ আপা।’
রোকসানার যে সময়ে জন্ম, তখন পূর্ববঙ্গের সমাজব্যবস্থা ছিল ভীষণ রক্ষণশীল। তবে ‘তারাবাগ’–এর বেশির ভাগ মানুষ ছিলেন সংস্কৃতিমনা। তাই বাড়িতে শিল্প–সাহিত্যের নিয়মিত চর্চা হতো। ওই বাড়ির ছেলেমেয়েরা খেলাধুলায়ও ছিলেন প্রায় সমান পারদর্শী। তাঁরা লন টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সাইক্লিং নানা ধরনের খেলাধুলায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
রোকসানা ১৯৬৯ সালে টিকাটুলির কামরুন্নেসা গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি ও ৭৩ সালে শেরে বাংলা গার্লস কলেজ (আগের নাম নারী শিক্ষা মন্দির) থেকে এইচএসসি পাস করেন। বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও যাননি শুধু পাইলট হবেন বলে। পরে ইডেন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে বিএসসি পাস করেন। স্প্যানিশ, জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষায়ও সমান দক্ষতা ছিল তাঁর।
বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য রোকসানা ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবে ভর্তি হন। কঠোর পরিশ্রমের ফলে দুই বছরের মাথায় ১৯৭৮ সালে পেয়ে যান কমার্শিয়াল বিমান চালানোর লাইসেন্স। তাঁর দক্ষতা ও সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে দুই বছরের মাথায় ফ্লাইং ক্লাবে ‘ইনস্ট্রাক্টর’–এর দায়িত্ব পান।
ফ্লাইং ক্লাবে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করলেও তাঁর লক্ষ্য ছিল, যে করেই হোক বিমানে পাইলট হিসেবে ঢোকা। একদিন ১৯৭৮ সালের ১৯ নভেম্বর ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ বিমান। ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষায় রোকসানা সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। তবে নারী হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাঁর নিয়োগ আটকে দেয়।
১৯৭৯ সালের ২৫ মে ক্যাডেট পাইলট হিসেবে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ বিমান আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে বলা হয়, শুধু পুরুষ প্রার্থীরাই আবেদন করতে পারবে। অর্থাৎ নারীরা আবেদনই করতে পারবে না। সেই ঘটনা তাঁকে প্রতিবাদী করে তোলে।
যোগ্যতা সত্ত্বেও নিয়োগ না পাওয়া এবং বিজ্ঞপ্তিতে নারীদের পাইলট হিসেবে আবেদনের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করে রোকসানা ১৯৭৯ সালের ৩১ মে দৈনিক ইত্তেফাকে চিঠি লেখেন। শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ বিমান বনাম মহিলা বৈমানিক’। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সংসদের নারী সদস্যদের উদ্দেশে লেখা দীর্ঘ চিঠিতে বিমানের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যে নারী–পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল, সেটি বিস্তারিত তুলে ধরেন।
চিঠিতে রোকসানা লেখেন, ক্যাডেট পাইলট হিসেবে পরীক্ষায় অন্য ছেলেদের চেয়ে তাঁর ফ্লাইং আওয়ার (বিমান চালানোর ঘণ্টা) তুলনায় বেশি ছিল। ককপিটে নারীদের দেখতে না চাওয়া বিমান কর্তৃপক্ষের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে ধিক্কার জানান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নির্দেশ সত্ত্বেও বিমানের দুই–তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নারীবিদ্বেষী আচরণের কারণে তাঁকে নারী ক্যাডেট পাইলট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সবশেষে রোকসানা চিঠিতে লিখলেন, ‘আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছি যে মহিলা হিসেবে আমি একবিন্দু সুবিধা চাই না বা কোটার সমর্থকও আমি নই, যদি আমি পুরুষদের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করিতে পারি, তবে শুধু মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ার জন্য আমাকে যেন আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়।’
রোকসানার সেই চিঠি ইত্তেফাকে ছাপা হওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়। উত্তপ্ত আলোচনা জাতীয় সংসদ পর্যন্ত গড়ায়। নারী সংসদ সদস্য, অধিকারকর্মী, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ প্রগতিশীল মানুষেরা তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন।
অবশেষে সরকারের হস্তক্ষেপে বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের বিজ্ঞপ্তিতে ‘লিঙ্গবৈষম্যের’ শর্ত তুলে নিতে বাধ্য হয়। পরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্যাডেট পাইলট হিসেবে নিয়োগ পান।
পাইলট রোকসানার নীল আকাশে ডানা মেলে ওড়া বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তিনি ক্যাডেট পাইলট থেকে প্রমোশন পেয়ে ফার্স্ট অফিসার হন। এরপর অপেক্ষায় ছিলেন ক্যাপ্টেন হওয়ার। দেখতে দেখতে চলে যায় ৪ বছর ৮ মাসের মতো। এরই মাঝে ঘটে হৃদয়বিদারক বিমান দুর্ঘটনা।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফকার–২৭ বিমানে করে ঢাকায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যে পড়েন। ওই দিন বিমানের মূল পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন কায়েস আহমদ মজুমদার এবং কো–পাইলট ছিলেন ফার্স্ট অফিসার কানিজ ফাতেমা রোকসানা। তীব্র বাতাসের কারণে তাঁরা রানওয়েতে দুই দফা ল্যান্ড করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তৃতীয় দফায় অবতরণের জন্য কন্ট্রোল টাওয়ারের কাছ থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরই বিমানটির সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারের বেতার সংযোগ পুরোপুরি ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে যায়। এ কারণে বেলা ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে কুয়াশার মধ্যে ওপর থেকে বাউনিয়া বিলকে ‘রানওয়ে’ মনে করে ল্যান্ড করতে গিয়ে ‘মিস জাজমেন্ট’ হয়।
বিধ্বস্ত হয়ে বিমানটি ২০ থেকে ২৫ ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। ওই দুর্ঘটনায় ৪৪ জন যাত্রী, দুই পাইলট, তিন ক্রুসহ ৪৯ জনের সবার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের ভেতরে এখন পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা।
কানিজ ফাতেমা রোকসানার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ২৯ বছর বয়সে। ’৮৪ সালে তাঁর একমাত্র সন্তান সৈয়দ শোয়েব হাছান বনির বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। রোকসানার স্বামী সৈয়দ হাছান বাকের ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক। তিনি একসময় পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) ঢাকা অফিসের ম্যানেজার ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে জীবনে তিনি আর বিয়ে করেননি। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে ইসলামাবাদের নিজ বাড়িতে মারা যান হাছান বাকের। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার চাকরির সূত্রে বনি বিভিন্ন দেশে থেকেছেন। পরে ’৯১ সালে তিনি সুইডেনে মামা–মামির কাছে চলে যান। সেখানে গণিতে পিএইচডি করে বর্তমানে একটি ভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন।
পাইলট রোকসানার মা–বাবা কেউ বেঁচে নেই। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই, তিন বোন। এর মধ্যে তিন ভাই–বোন মারা গেলেও বাকি তিন ভাই–বোন সপরিবারে সুইডেনে থাকেন।
রোকসানার ছোট ভাই রুমী ওয়ালিউল্লাহও মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা শারমিন সপরিবারে সুইডেনে থাকেন। সেখান থেকে টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানান, রোকসানার বাবা সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ ও মা সৈয়দা রাজিয়া সুলতানাসহ পরিবারের সবাই খুব কষ্টে জীবন পার করেছেন। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ বিমান দুর্ঘটনা ও উদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে অনেক দিন পত্রিকায় লিখেছেন। তিনি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। যত দিন ছিলেন, তত দিন ওই দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ উদ্ধারকর্মীর অভাবের কথা বলে গেছেন।
সুস্মিতা শারমিন বলেন, ‘দুর্ঘটনার আগের দিন রোকসানা তাঁর বাবা, অর্থাৎ আমার শ্বশুরকে ফোন করে বলেছিলেন, “বাবা, একটা সুখবর আছে। আমাকে ফার্স্ট অফিসার থেকে ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। এ–সংক্রান্ত চিঠিও আমি পেয়েছি।”’
লিটল আপার (রোকসানা) মৃত্যুর পর তাঁর মা–বাবা ও ভাইবোনেরা মিলে ‘রোকসানা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করতেন। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে টিকাটুলিতে ‘ক্যাপ্টেন রোকসানা’ নামে কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল ওয়ালিউল্লাহর পরিবার।
বাংলাদেশ বিমানের প্রথম দিকের আরেকজন নারী পাইলট ক্যাপ্টেন ইয়াসমিন রহমান। প্রথম আলোকে টেলিফোনে বর্ষীয়ান এই নারী বলেন, ‘৪১ বছর আগের দুর্ঘটনা সব কিছু ক্লিয়ার মনে নাই। তারপরও যতটুকু মনে পড়ে তা হলো—১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট এফ–২৭ বিমান দুর্ঘটনার এক–বা দুই দিন পর আমিসহ অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে ক্যাপ্টেন কায়েস, কো–পাইলট রোকসানা এবং বাকি তিন ক্রুর মরদেহ রাখা ছিল। ওখানেই লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হয়। আমার মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লোরে পাইলট রোকসানার লাশটি চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল।’
ক্যাপ্টেন ইয়াসমিনের মতে, ‘ফকার–২৭ বিমানটির পাইলটরা চাইলেও ঢাকা থেকে বিমানটি চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে পারতেন না। কারণ, ওই সময় চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার মতো বিমানে পর্যাপ্ত ফুয়েল ছিল না। তাই কুর্মিটোলাতেই বাধ্য হয়ে নামতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।’
বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ নাসির উদ্দীন আহমেদ। ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি ফ্লাইট অফিসার কানিজ ফাতেমা রোকসানার সহকর্মী ছিলেন। দুর্ঘটনার দিন দুপুরে তাঁর ‘ঢাকা টু সিলেট’ এবং রোকসানার ‘ঢাকা টু চিটাগং’ ফ্লাইট ছিল। কিন্তু সকাল থেকে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ফ্লাইট দেরি হচ্ছিল। এই ফাঁকে বিমানের ক্রু রেস্ট রুমে যাওয়ার পর রোকসানার সঙ্গে তাঁর ফ্লাইট নিয়ে কথাও হয়। ক্যাপ্টেন নাসির প্রথম আলোকে বলেন, খারাপ ওয়েদারের মধ্যে সে (রোকসানা) কীভাবে চট্টগ্রামে ফ্লাই করবে, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। রোকসানা ওই সময় তিন মাসের প্রেগনেন্ট থাকায় আমাকে বলছিলেন ওই দিনের (৫ আগস্ট) পরে তিনি আর বিমান চালাবেন না, ছুটিতে যাবেন।’
শেখ নাসির উদ্দীন আহমেদের মতে, ‘রোকসানা ছিলেন ভীষণ সাহসী ও চৌকস। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য, এই দেশকে সার্ভ করার আগেই ২৯ বছর বয়সে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়েছে।’
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুল বাসিত মাহতাব প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে বিমানে ১৭ জন নারী পাইলট আছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে ক্যাপ্টেন আছেন। তাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে বোয়িং–৭৮৭ ড্রিমলাইনার, বোয়িং–৭৩৭ এবং বোয়িং–৭৭৭ উড়োজাহাজ চালাচ্ছেন।
ক্যাপ্টেন মাহতাব বলেন, ‘পাইলট রোকসানা বাংলাদেশের এভিয়েশনের ইতিহাসে পথিকৃৎ। এ দেশের নারীরাও যে ফ্লাইং করতে জানেন, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দেখাদেখি এখন অনেক নারী পাইলট হচ্ছেন। নারীরা এই পেশায় বেশ ভালো করছেন।’
বিমান চালানোর প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা পাইলট সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানার জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে বিমানের মধ্যেই। অদম্য সাহসী সেই নারী শুধু নিজেই ডানা মেলে আকাশে ওড়েননি, তাঁকে দেখে উড়তে শিখেছেন পরবর্তী প্রজন্মের সাহসী নারীরাও।