শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

প্লট দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনজনের সাক্ষ্য

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলার দুজন তদন্ত কর্মকর্তাসহ তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন সাক্ষীদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। আগামী ৩ নভেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন আদালত।

আজ সাক্ষ্য দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জহিরুল ইসলাম খান, দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন।

এদিকে মামলার আসামি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। দুদকের পক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। পরে উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, প্লট দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা পৃথক ছয় মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত।

দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে–মেয়ে ছাড়া তাঁর পরিবারের অন্য অভিযুক্ত সদস্যরা হলেন বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)।

মামলায় শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে যে ১৬ জন অভিযুক্ত হয়েছেন, তাঁরা হলেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, গণপূর্তের তৎকালীন সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য কবির আল আসাদ, সদস্য তন্ময় দাস, সদস্য নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার।

দুদকের পিপি খান মো. মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী ঢাকায় যাঁদের প্লট, গাড়ি, বাড়ি কিছুই নেই, তাঁরা মূলত সংস্থার প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিবার রাজউকের কাছে মিথ্যা হলফনামা দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তাঁদের ঢাকা শহরে জমি, বাড়ি কোনো কিছুই নেই। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, শেখ হাসিনা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নামে বাড়ি, জমি, গাড়ি—সবই আছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁরা রাজউকের ৬০ কাঠার প্লট নিয়েছেন, যা অপরাধ। অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গসহ অন্যান্য অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ৬ মামলায় গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।