
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবি ছাপিয়ে এখন সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তাই যে এখন বড় হয়ে উঠেছে, ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে তা তুলে ধরলেন ইংরেজি দৈনিকটির সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে আজ সোমবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্যে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সামনে আনেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে প্রথম আলোর কার্যালয় ভস্মীভূত হয়ে যায়। এরপর ডেইলি স্টারেও হামলা হয়। তাদের কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন নূরুল কবীর।
এ হামলার প্রতিবাদে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক যৌথ প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে দেশের সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এবং মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)।
সেদিন ডেইলি স্টার ভবনে আগুন দেওয়ার পর ভেতরে আটকে পড়া সংবাদকর্মীদের প্রাণ সংশয়ে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘এমন যদি হতো যে যারা ডেইলি স্টারকে ঘৃণা করে, তারা বলত—এই সাংবাদিক তোদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই, তোরা বেরিয়ে যা, আমরা বিল্ডিংয়ে আগুন লাগাব। সেই ২৬-২৭ জন (সংবাদকর্মী) ছাদে আটকে ছিল এবং ফায়ার ব্রিগেডকে আসতে দেওয়া হয় নাই।’
এর মধ্য দিয়ে হামলাকারীরা ডেইলি স্টারের কর্মীদের হত্যা করতে চাওয়ার ইচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন সংবাদপত্রটির সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে (সামাজিক মাধ্যম) একটা দেখা গেছে যে তারা (হামলাকারী) বলছে, ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর যারা সাংবাদিক, তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের হত্যা করতে হবে।’
এই ‘নৃশংস’ ঘটনা সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছে মন্তব্য করে জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান মাহফুজ আনাম।
এই প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য দেন। প্রতিবাদ সভা শেষে সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন তাঁরা। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।