
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের নামে প্রথমবারের মতো সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করেছে বাংলা একাডেমি। এ বছর ছোটগল্পের জন্য জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং উপন্যাসের জন্য স্বকৃত নোমান এই পুরস্কার পেয়েছেন।
আজ ২৭ ডিসেম্বর রাবেয়া খাতুনের জন্মদিনে দুজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত দুই লাখ এবং স্বকৃত নোমান এক লাখ টাকার চেক পেয়েছেন। এ ছাড়া দুজনের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।
দুই পুরস্কার বিজয়ীর হাতে চেক, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা, সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সচিব এ এইচ এম লোকমান, শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর এবং রাবেয়া খাতুন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আমীরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাবেয়া খাতুন স্মৃতি পরিষদের তহবিল থেকে পুরস্কারের অর্থ দিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পুরস্কার প্রদানের এই ধারা প্রতিবছর অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান।
এদিকে আজ বিকেলে চ্যানেল আই ভবনে আলাদাভাবে রাবেয়া খাতুনের জন্মদিন পালন করা হয়েছে। এ ছাড়া ছিন্নমূল শিশুদের মধ্যে ছোটকাকু ক্লাবের পক্ষ থেকে খাদ্য ও কম্বল বিতরণ করা হয়।
রাবেয়া খাতুন ঢাকার বিক্রমপুরে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। তাঁর বাবা মৌলভি মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মা হামিদা খাতুন। তিনি আরমানিটোলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (মাধ্যমিক) পাস করেন ১৯৪৮ সালে।
রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ‘নিরাশ্রয়া’ (অপ্রকাশিত)।
রাবেয়া খাতুনের স্বামী প্রয়াত এ টি এম ফজলুল হক ছিলেন দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রথম পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক ও চিত্র পরিচালক। বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এর পরিচালকও তিনি। ১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের চার সন্তান ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।
রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে একই নামে ২০০৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। ২০১১ সালে তাঁর আরেক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মধুমতী’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী। ২০০৩ সালে তাঁর লেখা ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অবলম্বনে একই নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন অভিনেত্রী মৌসুমী।
রাবেয়া খাতুন বাংলা একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার ছিলেন। এ ছাড়া জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’র বিচারক ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাতীয় বিতর্কের জুরিবোর্ডের বিচারক ও সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন রাবেয়া খাতুন। যুক্ত ছিলেন বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে।
তাঁর লেখা বিভিন্ন উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘মধুমতী’, ‘সাহেব বাজার’, ‘অনন্ত অন্বেষা’, ‘রাজারবাগ শালিমারবাগ’, ‘মন এক শ্বেত কপোতী’, ‘ফেরারী সূর্য’, ‘অনেকজনের একজন’, ‘জীবনের আর এক নাম’, ‘দিবস রজনী’, ‘সেই এক বসন্তে’, ‘মোহর আলী’, ‘নীল নিশীথ’, ‘বায়ান্ন গলির এক গলি’, ‘পাখি সব করে রব’, ‘নয়না লেকে রূপবান দুপুর’, ‘মিড সামারে’, ‘হানিফের ঘোড়া’, ‘হিরণ দাহ’, ‘এই বিরহকাল’, ‘হোটেল গ্রীন বাটন’, ‘বাগানের নাম মালনিছড়া’, ‘প্রিয় গুলশানা’, ‘বসন্ত ভিলা’, ‘ছায়া রমণী’, ‘সৌন্দর্যসংবাদ’, ‘হৃদয়ের কাছের বিষয়’, ‘মালিনীর দুপুর’, ‘রঙিন কাচের জানালা’ ইত্যাদি। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক, জসীমউদ্দীন পুরস্কার, শেরেবাংলা স্বর্ণপদক, ঋষিজ সাহিত্য পদক, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, শেল্টেক্ পদক ইত্যাদি পুরস্কার পেয়েছেন।