‘সুস্থ ত্বকের গল্প’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গত ৬ সেপ্টেম্বর
‘সুস্থ ত্বকের গল্প’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গত ৬ সেপ্টেম্বর

ত্বকের যত্নে সচেতনতা: ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেকোনো সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষার প্রাথমিক উপায়। পরিবারের কারও ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিলে অভিজ্ঞ চিকিৎসক পরামর্শ নিতে হবে। সেলফ-মেডিকেশন বা ফার্মেসিতে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রথম আলো ডটকম ও এসকেএফ ডার্মাটোলজির যৌথ উদ্যোগে ‘সুস্থ ত্বকের গল্প’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান এবং ন্যাশনাল স্কিন সেন্টারের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন তিনি।

ত্বক সুস্থ রাখতে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে আয়োজিত এই অনলাইন আলোচনার প্রথম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্র্যান্ড ম্যানেজার সুরাইয়া আহমেদ।

এখনো ত্বকের বিভিন্ন রোগ নিয়ে রয়েছে অবহেলা এবং এর চিকিৎসা নিয়ে রয়েছে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও সচেতনতার অভাব। তাই আলোচনার এ পর্বে ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী। পর্বটি গত শনিবার সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলোজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

আলোচনার শুরুতেই উপস্থাপক জানতে চান, ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন বলতে আসলে কী বোঝায়? এটা কি শুধুই দাদ, নাকি এর সঙ্গে আরও কিছু জড়িত?

উত্তরে অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একে সাধারণভাবে দাদ বলে থাকি। অনেকেই এটিকে ছত্রাক বা ফাঙ্গাসও বলে। তবে এটি ফাঙ্গাস হিসেবেই বহুল প্রচলিত।’

অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী জানান, এটি একধরনের পরজীবী থেকে হয়, যা ক্লোরোফিলবিহীন একপ্রকার প্ল্যান্ট। এর সাধারণ নাম হলো কিউটেনিয়াস ফাঙ্গাল ইনফেকশন। তবে শুধু ত্বকের উপরিভাগে হলে একে ‘টিনিয়া’ বলা হয়। স্থানভেদে এর বিভিন্ন নাম হয়, যেমন শরীরে হলে টিনিয়া কর্পোরিস, মাথায় হলে টিনিয়া ক্যাপিটিস, শরীরের ভাঁজে হলে টিনিয়া ক্রুরিস, পায়ে হলে টিনিয়া পেডিস ইত্যাদি। টিনিয়া ছাড়াও টিনিয়া ভেসিকোলারিস এবং ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যান্স নামে আরও দুই ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা যায়।

কী কী কারণে ত্বকে এ ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে? জানতে চাইলে ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, ‘এটি মূলত একটি ছোঁয়াচে রোগ। কাউকে এ ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ করলে তাঁর সংস্পর্শে এলেই এই রোগ ছড়ায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র থাকার কারণে এটি বেশি হয়।’

প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানতে চান, আবহাওয়ার সঙ্গে আসলে ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কী সম্পর্ক রয়েছে?

অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, চর্মরোগের সঙ্গে আবহাওয়া, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক অবস্থার সংযোগ খুবই ঘনিষ্ঠ। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া ফাঙ্গাস বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। যখন শরীর ঘেমে যায় কিংবা কোনো কারণে ভেজা থাকে, বিশেষ করে শরীরের ভাঁজে বা আঙুলের ফাঁকে, সেই ভেজা স্থানগুলোতে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়। যার ফলে গ্রীষ্মকালে এটি বেশি দেখা যায়। শীতকালেও এটি হয়ে থাকে কিন্তু তুলনামূলক কম। ছত্রাকের ধরনভেদে এটি যেকোনো ঋতুতে হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশনগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়? উপস্থাপকের এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে টিনিয়া অর্থাৎ দাদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এটি মানুষ থেকে মানুষে, মাটি থেকে মানুষে (জিওফিলিক) অথবা প্রাণী থেকে মানুষে (জুওফিলিক) ছড়াতে পারে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই এটি একই কমোড, চেয়ার, কাপড়, বিছানা শেয়ার করার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী

এ ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। যেমন বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশনের কভার, সোফার কভার, তোয়ালে ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে কিংবা ইস্ত্রি করতে হবে যেন ছত্রাকের জীবাণু মারা যায়। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেনে চলাও জরুরি। যেমন নিয়মিত সাবান ব্যবহার করা, বিশেষ করে বাইরে থেকে বাসায় এসে হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সঙ্গে অন্য রোগ, যেমন ডায়াবেটিসের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, ‘ডায়াবেটিস থাকলে ছত্রাক সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়। কারণ শরীরে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। যা ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ ছাড়া কিডনি কিংবা লিভারের সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, বেশির ভাগ অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ কিডনির জন্য নিরাপদ নয়।’

ছত্রাকের সংক্রমণে স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ ব্যবহার সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, ‘স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। এগুলো ফাঙ্গাসকে ধ্বংস না করে সাময়িকভাবে চুলকানি কমায়। এতে রোগ জটিল হয়ে যায় এবং পরে চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ খাওয়া অর্থাৎ সেলফ মেডিকেশন খুবই বিপজ্জনক। সার্টিফায়েড ডাক্তার ছাড়া কোনো প্রকার চিকিৎসা গ্রহণ মোটেও উচিত নয়।’