
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামীকাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে ‘গুমের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে বিচার কর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তাজুল ইসলাম এ কথা জানান। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। ১৭ থেকে ৩১ মে আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ পালন করা হয়।
শেখ হাসিনাকে ‘গুম ও আয়নাঘরের নিউক্লিয়াস’ বলে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। বিচারের ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাবে বলে জানান তিনি।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, বিচারের কাজ পুরোদমে এগোচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ করতে যুক্তিসংগত সময় লাগবে। এ সময় ১০ থেকে ১৫টি উল্লেখযোগ্য গুমের ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জুন মাসের মধ্যে প্রতিবেদনগুলো পাওয়া যাবে।
বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা অনেকটা দূর হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, অপরাধের কাঠামো এবং অপরাধী সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোটাদাগে তথ্য চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা থেকে গেছে। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
তাজুল ইসলাম জানান, বিচারের ক্ষেত্রে তাঁরা খুবই সাবধানতা অবলম্বন করছেন। তিনি বলেন, বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করা, মানবাধিকার রক্ষা করা, বিচারের নামে অবিচার যাতে না হয়, যেগুলো অতীতে হয়েছে, সেগুলো যেন না হয়, সে বিষয়ে তাঁরা সতর্ক রয়েছেন।
আলোচনাসভায় প্রবন্ধ পড়েন অধিকারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা তাসনীম ফাহমিনা। এতে জানানো হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গুমের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। এ সময় থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ৭৩০ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে গুমের পর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৮৩ জন। আর গুম থেকে ফেরত না আসা ব্যক্তির সংখ্যা ১৬২ জন।
অধিকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন তাসনীম ফাহমিনা। এগুলো হলো, গুম প্রতিরোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করা, যে খসড়া করা হয়েছে তাতে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, যারা গুম থেকে আর ফেরত আসেননি তাদের সঙ্গে ঘটা ঘটনার সত্য উদ্ঘাটন করা এবং ভারতে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তি থেকে থাকলে কূটনৈতিকভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।
আলোচনা সভায় বিশেষ বক্তা ছিলেন আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। বিগত সরকারের আমলে গুম সংক্রান্ত একটি ছবি প্রকাশ করার কারণে তাঁকে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের র্যাব কীভাবে হেনস্তা করেছিল তা সভায় তুলে ধরেন তিনি।
সভায় গুম থেকে ফেরত আসা সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান বলেন, ‘গুমের সব আলামত নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আয়না ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারা করছে এগুলো। দশ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য কিছুই করেনি।’
গুম থেকে ফিরে আসা আহমাদ বিন কাসেম আরমান গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য আলাদা কমিশন বা কমিটি গঠন করা হোক। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে আহমাদ বিন কাসেম।
অধিকারের সভাপতি তাসনিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক ফাইজুল হাকিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, সাংবাদিক শহীদুজ্জামান প্রমুখ।