
গণ-অভ্যুত্থানের পর আগামী নির্বাচনকে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।
আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সব জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের নতুন করে একটি সুযোগ দিয়েছে। অন্য জেনারেশন এই সুযোগ পাবে না। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব, আর যদি না পারি তাহলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এর আগেও আমরা নির্বাচন দেখেছি। বিগত আমলে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, যেকোনো সুস্থ মানুষ বলবে—এটা নির্বাচন নয়, প্রতারণা হয়েছে।’
আগামী নির্বাচন অন্যান্য দায়িত্বের মতো নয় বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। যদি ভালোভাবে এই দায়িত্বটি পালন করা যায়, তাহলে আগামী নির্বাচনের দিনটি জনগণের জন্যও ঐতিহাসিক হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলেই সরকার তার দায়িত্বটি সফলভাবে পালন করতে সক্ষম হবে।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট দুটিই জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য, আর গণভোট শত বছরের জন্য।
গণভোট সম্পর্কে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশটাকে স্থায়ীভাবে পাল্টে দিতে পারি। যে নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করতে চাই, তার ভিতটা এর মাধ্যমে গড়তে পারি।’
সদ্য যোগদান করা ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন করা।’
ইউএনওদের নিজ নিজ এলাকার সব পোলিং স্টেশন পরিদর্শনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, এলাকাবাসী ও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন মুহাম্মদ ইউনূস।
গণভোট বিষয়ে ভোটারদের সচেতন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ভোটারদের বোঝাতে হবে যে আপনারা মন ঠিক করে আসুন—“হ্যাঁ”-তে দেবেন নাকি “না”-তে ভোট দেবেন—মন ঠিক করে আসুন।’
কর্মকর্তাদের ধাত্রীর সঙ্গে তুলনা করেন মুহাম্মদ ইউনূস। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধাত্রী ভালো হলে জন্ম নেওয়া শিশুও ভালো হয়।
কর্মকর্তাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি অপতথ্য-গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
নির্বাচনে ভোটদানের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদানের ওপর গুরুত্ব দেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, নারীরা যেন ঠিকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শিগগিরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন, কীভাবে, কোন কাজটি করবেন—তার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখন থেকেই নিন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।