
শিক্ষাকে একটি জাতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিশুকে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবেন, তা নিয়ে ভাবনায় থাকেন মা-বাবা। বাংলাদেশে মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’।
ঢাকার গুলশানে অবস্থিত সম্পূর্ণ ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি চার বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে স্কুলটিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলটির শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ৩৫ জন শিক্ষক এবং ২০ জন কর্মী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল্লাহ জামান। মিডল স্কুল ও জুনিয়র স্কুলের প্রধান হিসেবে যথাক্রমে রয়েছেন সায়মা রহমান ও তাসলিমা সামাদ।
ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসার জন্য আগ্রহী হবে, যদি সেখানে থাকে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ। গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অন্যতম এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছে ইতিমধ্যে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। স্কুলেই শিক্ষার্থীদের সব পড়া শেষ করা হয়। প্র্যাকটিস বা রিভিশনের জন্য দেওয়া বাড়ির কাজ শিক্ষার্থী নিজেই সম্পন্ন করতে পারে। তাই কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয় না।
‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি ‘ইনটেনসিভ কেয়ার’ নেওয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য যোগ্য করে তোলা হয়। ফলে পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে দৌড়াতে হয় না। বিশেষভাবে, প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কারিকুলামে ‘কোডিং’কে একটি পাঠ্যবিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রথম।
এ ছাড়া নৈতিক শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সুযোগ রয়েছে পবিত্র কোরআন হিফজ করার। স্বাভাবিক স্কুলিং ঠিক রেখে সকালে দেড় ঘণ্টা এবং স্কুল ছুটির পর এক ঘণ্টা, প্রতি শনিবার চার ঘণ্টা এবং বাৎসরিক দুই মাস তথা গ্রীষ্মকালীন ও পবিত্র রমজানের ছুটি কাজে লাগিয়ে অসংখ্য কোরআনে হাফেজ তৈরি হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। শুধু পড়ালেখাই নয়, স্কুলটিতে রয়েছে সহশিক্ষা ও প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমভিত্তিক বাড়তি আয়োজন।
শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে এখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলাধুলা করানো হয়। ভালো পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাত্যহিক জীবনে একজন শিক্ষার্থী যেন সর্বোচ্চ মানবিক মূল্যবোধ এবং ইসলামের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি হয় তার নিয়মিত অনুশীলন করা হয়। দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবোধ তৈরির জন্য প্রতিদিন অ্যাসেম্বলিতে কোরআন তিলাওয়াত, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শপথ পাঠ ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর ইত্যাদি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করাতে এবং পাঠ্যবইয়ের শিক্ষাকে বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শন করানো হয়।
বিজ্ঞানশিক্ষাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে স্কুলটিতে প্রতিবছর বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে অভ্যন্তরীণভাবে বিজ্ঞান এবং গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন এবং জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি প্রতিভা বিকাশের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয় বানান প্রতিযোগিতা, হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বইমেলা এবং পিঠা উৎসব ইত্যাদি।
‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করার পর কোনো শিক্ষার্থী মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাইরে ইসলামি বিষয় যেমন কোরআন, হাদিস, ফিকহ্ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা নিতে চাইলে তারও সুযোগ রয়েছে। কারণ ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের একজন শিক্ষার্থী সাধারণ বিষয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে ইসলাম শিক্ষা এবং আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ফলে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার জন্য মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতনামা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ মৌমিতা ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি দক্ষতাভিত্তিক কারিকুলামকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি, যা প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক পাঠদানের পদ্ধতি থেকে আলাদা। আমরা মনে করি, বিবর্তিত বিশ্বের চাহিদা মেটাতে দক্ষতানির্ভর শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক নির্দেশাবলি ও কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে গতানুগতিক চিন্তাভাবনা, বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতের চেষ্টা করে থাকি। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষা শুধু একাডেমিক দক্ষতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চরিত্রের বিকাশে তাই আমাদের সমন্বিত পাঠ্যক্রম সহানুভূতি, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মতো মূল্যবোধকে উন্নীত করতে নিশ্চিত করে।’
মৌমিতা ইসলাম আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে একটি অগ্রগামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা ছাত্রছাত্রীদের সম্পূর্ণরূপে বিকশিত ব্যক্তিত্বের বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে চাই। আমাদের চাওয়া, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সুনাগরিক হিসেবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানবতার সেবা করার প্রতি গভীর দায়িত্ববোধের অধিকারী হবে।’
আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে আদর্শিক প্রজন্ম গড়ার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে যাওয়াই গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মীরা।