
কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের চলমান সংকট নিরসনে আজ বুধবার থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তিনটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু করা হয়েছে। কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকা তিনটি ডায়ালাইজার মেশিনগুলো দিয়ে এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডোর ডায়ালাইসিস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড ফি বৃদ্ধি করায় এবং চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিসে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার কারণে সংকট তৈরি হয়। এতে রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি প্রায় তিন গুণ বেড়ে যায়। যার কারণে পাঁচ দিন ধরে আন্দোলনে রয়েছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের সড়ক অবরোধ করার সময় পুলিশের মারধরের শিকার হন এক রোগী ও কয়েকজন স্বজন।
এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠক করে এবং মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে ডায়ালাইসিসের জন্য সমাধান খোঁজার চেষ্টা শুরু করে। গতকালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোভিডের জন্য বরাদ্দ থাকা তিনটি মেশিন আজ সকাল থেকে সাধারণ রোগীদের জন্য চালু করা হয়।
জানতে চাইলে চমেক নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান মো. নুরুল হুদা বলেন, সকাল থেকে কোভিডের জন্য বরাদ্দ মেশিন তিনটি সাধারণ রোগীদের জন্য চালু করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ অনুযায়ী, অতি দরিদ্র ও জরুরি রোগীদের এখানে ডায়ালাইসিস করা হবে। ছয় মাসের ডায়ালাইসিসের জন্য প্রতি রোগীকে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। এতে ৪১৭ টাকার মতো প্রতি ডায়ালাইসিসে ব্যয় হবে।
এর বাইরে নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে আগে থেকে অন্তর্বিভাগের রোগীদের জন্য চারটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু রয়েছে বলে জানান নুরুল হুদা। উল্লেখ্য, কিডনি বিকল রোগীদের প্রতিজনকে মাসে ৮ থেকে ১২টি ডায়ালাইসিস করাতে হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডোর ২০১৭ সাল থেকে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এই সেবা দিয়ে আসছে। প্রতিবছর চট্টগ্রামের জন্য সাড়ে ছয় হাজার সেশন তারা ভর্তুকি মূল্যে ডায়ালাইসিস করানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ। এই ভর্তুকি মূল্য গত বছর ছিল ৫১০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে ৫৩৫ টাকা করা হয়েছে।
কারা ভর্তুকি পাবেন, তা নির্ধারণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভর্তুকি সাড়ে ছয় হাজারের দি্বগুণের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়ায় এ বছরের শুরু থেকে তার লাগাম টানার চেষ্টা করে চমেক হাসপাতাল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এত দিন যাঁরা সব কটি ভর্তুকি মূল্যে ডায়ালাইসিস করাতেন, তাঁদের এখন থেকে অর্ধেক করাতে হবে নিয়মিত মূল্যে।
নিয়মিত মূল্য গত বছর ছিল ২ হাজার ৭৮৫ টাকা। এ বছর তা করা হয় ২ হাজার ৯৩৫ টাকা। এতে প্রতি রোগীর ক্ষেত্রে এক মাসে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ পড়ে। আগে তা ছয় হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ কারণে রোগীরা পাঁচ দিন ধরে চমেক হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত স্যানডোরের সামনে ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে আসছিলেন।
নতুন মেশিন চালু হওয়ায় আস্তে আস্তে এই সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই তিনটির সঙ্গে আরও মেশিন যুক্ত করার চেষ্টাও চলছে। কোভিড রোগী এখন না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে এই তিনটি মেশিন সাধারণ রোগীদের কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান।