অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব
অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব

সাক্ষাৎকার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

কী দুঃখে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করব

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ভোটের আগের দিন আজ বুধবার নিজের কার্যালয়ে নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসানশফিকুল ইসলাম

প্রশ্ন

৩৫ বছর পর রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছে। প্রস্তুতি কেমন, সার্বিক পরিস্থিতি কী?

সালেহ্ হাসান নকীব: নির্বাচন আয়োজনের সবকিছুর মূল দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচন কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার জন্য আমরা সিরিজ অব মিটিংস (ধারাবাহিক বৈঠক) করেছি। পরিকল্পনা করেছি। খুঁটিনাটি সবকিছু মিলিয়ে প্রস্তুতি যথেষ্ট ভালো।

প্রশ্ন

উপাচার্য হিসেবে আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর পাঁচ মাসের মধ্যে রাকসু নির্বাচন দিতে চেয়েছিলেন। এই অঙ্গীকার রাখা গেল না কেন?

সালেহ্ হাসান নকীব: এ বিষয়ে প্রথমে একটু ক্ল্যারিফিকেশনের (স্পষ্ট করা) দরকার আছে। আমার প্রতিশ্রুতি শিক্ষার্থীদের কাছে নয়, আমার নিজের কাছেই ছিল। বিগত আমল থেকেই আমি অনুভব করেছি রাকসু নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত। সেই জায়গা থেকে যখন সুযোগ এসেছে, আমি চেয়েছিলাম ছয় মাসের ভেতরে আমি এটি করে ফেলব। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি, নানা ঘটনাপ্রবাহ, অনেক বাধাবিপত্তির কারণে সেটি পারিনি। যা–ই হোক, এখন আমরা একেবারে দ্বারপ্রান্তে আছি। বেটার লেট দ্যান নেভার (একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো)।

অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব
প্রশ্ন

আপনি বলছিলেন, রাকসু নির্বাচন হোক সেটি আপনি অনুভব করতেন। কেন?

সালেহ্ হাসান নকীব: বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্ররাজনীতির চেহারা আমি দেখেছি। একটা প্রচণ্ড রকম অসুস্থ ধারা ছিল। সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চাটা শুরু করতে হবে। এ কাজগুলো করতে গেলে ছাত্র সংসদের প্রয়োজন।

প্রশ্ন

নির্বাচনের নিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন?

সালেহ্ হাসান নকীব: নিরাপত্তার ব্যাপারে দুটো দিক আসে। একটা হলো বাস্তবতা। অন্যটি হচ্ছে, আদর্শগত দিক থেকে কী হওয়া উচিত। আদর্শগত দিক থেকে দেশজুড়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের ফোকাস এবং কথাবার্তা, সেটি আসলে নন-আইডিয়াল (আদর্শ নয়) পরিস্থিতির ইন্ডিকেটর (নির্দেশক)। কারণ, ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন গ্রীষ্মকালীন ছুটি হয়, সে রকমই একটা রুটিন ব্যাপার হওয়া উচিত। কিন্তু ক্যাম্পাসগুলো যেহেতু এত দিন সুস্থ ধারায় পরিচালিত হয়নি। কাজেই এগুলো এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অনেকগুলো সভা করেছি। পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, র‍্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমার প্রত্যাশা থাকবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যূনতম এনগেজমেন্টের (সম্পৃক্ততা) মধ্যে দিয়ে নির্বাচন শেষ করা। সেটা পারলে সেটা আমাদের জন্য বড় সাফল্য হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন স্তরের নিরাপত্তা দেবেন। তবে আমরা চাচ্ছি ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা—সবাই মিলে খুব সুন্দর করে নির্বাচনটা করে ফেলব।

ক্যাম্পাসের বাইরের স্থানীয় রাজনৈতিক পক্ষের অবস্থানের বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব জায়গায় নজর রাখতে বলেছি। সমস্যার উদ্ভব যেকোনো জায়গা থেকে হতে পারে।

অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব
প্রশ্ন

নিয়মিত রাকসু আয়োজনের কথা বললেন। আপনি এটিকে ‘ক্যালেন্ডার ইভেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করবেন কি না? সিনেট দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর, সেটি কার্যকর হবে কি না?

সালেহ্ হাসান নকীব: আমি খুব স্বল্প মেয়াদের জন্য এসেছি। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে কী হবে, সেটি নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে যাঁরা আসবেন, তাঁদেরই চিন্তাভাবনা করতে হবে। তবে আমি খুবই খুশি হব, যদি নির্বাচনটা ধারাবাহিকভাবে হয়।

প্রশ্ন

‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ (কৌশলে কারচুপি) নিয়ে অনেক প্রার্থী শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?

সালেহ্ হাসান নকীব: একটা রাষ্ট্র যে উপাদানগুলোর ওপর টিকে থাকে, তার ভেতরে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান হলো সোশ্যাল ক্যাপিটাল (সামাজিক মূলধন)। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা তা হারিয়ে ফেলেছি। এবং আমরা এই চ্যালেঞ্জটা খুবই ভালোভাবে নিতে চাই। আমরা অবিশ্বাসের জায়গাটা দূর করতে চাই। আমাদের কী দুঃখ পড়েছে যে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং করব। আমরা সবটুকু দিয়ে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন

আমরা দেখছি, প্রার্থীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভোটের পর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য জয়ী প্রার্থীরা আপনার কাছেই আসবেন। এক বছরে এত প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আপনি মনে করেন?

সালেহ্ হাসান নকীব: প্রার্থীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার মধ্যে যতটুকু আমাদের সামর্থ্য আছে, সেটুকু আমরা তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।