
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে আপনাদের সামনে তুলে ধরবে, কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ডিসেম্বর মাস বাঙালির জীবনে এক বিশেষ আবেগ ও গৌরবের নাম। আমাদের বিজয়ের মাসের তৃতীয় দিনটিতে দৃষ্টি ফেরানো যাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ছোট্ট, শান্ত কিন্তু অদম্য সাহসী দেশ লাওসের দিকে। ২ ডিসেম্বর লাওস উদ্যাপন করে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব—জাতীয় দিবস (National Day)। ১৯৭৫ সালের এই সময়েই দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ আর রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে লাওস নিজেকে একটি গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র ঘোষণা করে।
লাওসের বিজয়ের ইতিহাস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতোই ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল। দেশটি একসময় ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ১৯৫৩ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা পেলেও শান্তি তাদের ধরা দেয়নি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় লাওস জড়িয়ে পড়ে এক ভয়াবহ ও অসম যুদ্ধে, যা ইতিহাসে ‘গোপন যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। স্নায়ুযুদ্ধের সেই উত্তাল সময়ে যুক্তরাষ্ট্র লাওসের ওপর বিপুল পরিমাণ বোমা বর্ষণ করে, যা মাথাপিছু হিসেবে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি। কিন্তু লাওসের বিপ্লবী সংগঠন ‘পাথেত লাও’ (Pathet Lao) হার মানেনি। তারা জঙ্গলে, গুহায় ও পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থেকে লড়াই চালিয়ে গেছে।
১৯৭৫ সাল ছিল পরিবর্তনের বছর। ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের পতনের পর লাওসেও বিপ্লবীরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর, ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর ৬০০ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক পতন ঘটে এবং রাজা সাভাঙ্গ ভাত্তানা পদত্যাগ করেন। প্রিন্স সুফানৌভং, যিনি ‘লাল রাজপুত্র’ নামে পরিচিত ছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় ‘লাও পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক’।
প্রতিবছর ডিসেম্বরের শুরুতে লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েন লাল-নীল পতাকায় ছেয়ে যায়। পতাকার মাঝখানের সাদা বৃত্তটি মেকং নদীর ওপর পূর্ণিমার চাঁদের প্রতীক, যা একই সঙ্গে দেশটির জনগণের ঐক্যের বার্তাও বহন করে। লাওসের এই বিজয় আমাদের শেখায়, বিশ্বের পরাশক্তি যত বড়ই হোক না কেন, মাটির প্রতি ভালোবাসা আর স্বাধীনতার অদম্য আকাঙ্ক্ষার কাছে তাদের নতি স্বীকার করতেই হয়। আমাদের ১৬ ডিসেম্বরের মতোই লাওসের এই বিজয় শোষণমুক্তির এক অনন্য দলিল।