তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে

প্রতিপক্ষ অভিন্ন, ভয় আমাকেও দেখায়: রিজওয়ানা হাসান

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, যারা এই আগুন দিয়েছে, তারা যেমন গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ, তেমনি সরকারেরও প্রতিপক্ষ।

আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

এ অনুষ্ঠানেই বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেছিলেন, সরকারের কোনো না কোনো অংশ প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় ও ছায়ানট ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটতে দিয়েছে।

১৮ ডিসেম্বর রাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের পাশাপাশি প্রথম আলোর কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একই রাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়েও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়। খবর পেয়ে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে গিয়ে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর হেনস্তার শিকার হন।

এ ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ হামলার ঘটনা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার শামিল। বিজেসি ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনেও অতিথিদের বক্তব্যে ঘুরেফিরে আসে গণমাধ্যমে হামলার প্রসঙ্গ।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যারা আগুনটা দিয়েছে, তারা আসলে আমাদের কমন প্রতিপক্ষ। আপনার যদি কারও মতামত পছন্দ না হয়, আপনি ভিন্নমতের একটা পত্রিকা খোলেন, আপনার পত্রিকাকে আপনি জনপ্রিয় করে তোলেন, আপনি সেটা না করে পত্রিকায় আগুন লাগিয়ে দেবেন, আর মনে করবেন আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে গেল, এটা তো হতে পারে না।’

ভয় যারা দেখাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ভয় কি আমাকে দেখায়নি? আপনারা তো এটা জানেন, আমার বাসার সামনেও ককটেল ফাটানো হয়েছে। অর্থাৎ ভয় যারা দেখাচ্ছে, তারা কিন্তু আমাদের কমন প্রতিপক্ষ। এই কমন বা অভিন্ন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি আমাদের লড়াই করতে হয়, লড়াই তো করতেই হবে এবং জিততে হয়, তাহলে একটা কথা বলব...একজন আরেকজনকে প্রতিপক্ষ মনে করে কোনো কাজ হবে না।’

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আজ শনিবার দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে অতিথিরা

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন থামাতে সরকারের তৎপরতার কথা তুলে ধরেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘তবে প্রোঅ্যাকটিভ যেটুকু হওয়ার কথা ছিল, সেটুকু না হওয়াতে এই গণমাধ্যমের যেমন ক্ষতি হয়েছে, আমাদেরও কিন্তু ক্ষতি কম হয়নি। আমরা সরকার হিসেবে এই ক্ষতিটা উপলব্ধি করি।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, নিউ এজ পত্রিকা এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও যমুনা টিভির ইতিবাচক ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

অনুষ্ঠানে অন্য অতিথিদের বিভিন্ন দাবি ও আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান তাঁর দেড় মাসের মেয়াদ থাকার কথা তুলে ধরে বলেন, এই দেড় মাসে দুটো কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। একটা কাজ হচ্ছে সম্প্রচার কমিশন অধ্যাদেশ জারি। তিনি আশা করছেন, আজকের মধ্যে প্রথম খসড়াটি করতে পারবেন। দ্বিতীয়টি হলো প্রেস কমিশন অধ্যাদেশ জারি। তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার যেন চূড়ান্ত করা যায়, সেটারও দ্রুততার সঙ্গে চেষ্টা করা হবে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা।

সাংবাদিক শাহনাজ শারমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ডেইলি স্টারের কলসাল্টিং এডিটর কামাল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিজেসির উপদেষ্টা খায়রুল আনোয়ার, বিজেসির চেয়ারম্যান ও মাছরাঙা টিভির প্রধান সম্পাদক রেজোয়ানুল হক, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিজেসির ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের এ–দেশীয় প্রতিনিধি মো. আল মামুন, সাংবাদিক তালাত মামুন, ইলিয়াস হোসেন, মিল্টন আনোয়ার।