সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার মকিমপুর গ্রামে রয়েছে এই জমিদারবাড়ি
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার মকিমপুর গ্রামে রয়েছে এই জমিদারবাড়ি

মকিমপুর জমিদারবাড়ি

চুন–সুরকি খসে পড়েছে অনেকাংশে। বেরিয়ে এসেছে লাল ইট। বাড়িটির এখন জীর্ণ দশা। হবেই না কেন। বয়স তো কম হলো না—প্রায় দেড় শ বছর। বলছি মকিমপুর জমিদারবাড়ির কথা। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা সদর থেকে কিলোমিটার দুয়েক উত্তরে গেলে মকিমপুর গ্রামে দেখা মিলবে বাড়িটির।

সম্প্রতি বাড়িটিতে গিয়ে কথা হয় জমিদার পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন বাড়িটির ইতিহাস–ঐতিহ্যের নানা কথা। বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন জমিদার গোবিন্দ রায় চৌধুরী। তাঁর ছিল দুই ছেলে। জমিদার জীবিত থাকা অবস্থায় এক ছেলের মৃত্যু হয়। আরেক ছেলের বংশধরেরা বর্তমানে এখানে রয়েছেন।

মকিমপুরের মূল জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করা হয় ১৮৮৫ সালে। এই ভবনে সাতটি কক্ষ। জমিদার পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম কয়েক বছর আগেও এই ভবনেই বসবাস করতেন। এখন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনের উত্তর ও পশ্চিম পাশে আলাদা বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। তবে বাড়ির সামনে ১৮৮৭ সালে নির্মাণ করা মন্দিরে এখনো পূজা হয়।

মন্দিরটিতে বিশেষ করে লক্ষ্মীপূজা হয় বেশ ঘটা করে। আগের দিনের নিয়ম মেনে এলাকার হিন্দুধর্মাবলম্বী এবং আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে জমিদার পরিবার। পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য অমল কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের দাদু মকিমপুর জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন। তিনি বাড়ির সামনে এই মন্দিরও নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপূজায় সবাইকে আমরা ডাকি।’

জমিদার গোবিন্দ রায় চৌধুরী সম্বন্ধে ভালো ও মন্দ—দুই ধরনের জনশ্রুতিই রয়েছে। কেউ বলেন, তিনি ছিলেন প্রজাদরদি জমিদার। আবার কেউ বলেন অন্য কথা। তাঁর দাপটের কারণে প্রজারা নাকি জমিদারবাড়ির সামনে দিয়ে ছাতা মাথায় ও জুতা পায়ে যেতে পারতেন না। খাজনা আদায়ের বেলায়ও নাকি জমিদার গোবিন্দ রায় চৌধুরী ছিলেন ভীষণ কড়া।

একসময় মকিমপুর গ্রামে বসবাস করতেন জামাত আলী সেখ। এখন উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের কোদলা গ্রামে থাকেন। জামাত আলী বলেন, দেশ স্বাধীনের পরে জমিদার পরিবারের লোকজনের সহায়তায় এখানে আসা। তাঁরা ভালো জমিদার ছিলেন।

তবে জমিদার নিয়ে ভালো–মন্দ যে জনশ্রুতিই থাকুক না কেন—বাড়িটি একনজর দেখতে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।

সে কথাই বলছিলেন জমিদার পরিবারের সদস্য অশোক কুমার রায়। তিনি জানালেন, জমিদারবাড়ি ও মন্দিরটি দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী মানুষজন আসেন। বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাঁরা। জমিদারবাড়ির চতুর্থ প্রজন্মের পুত্রবধূ আঁখি রায়ও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের জানাশোনা যা আছে, তা তাঁদের জানাই।’

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার স্কুলশিক্ষক মো. মোকসেদ আলমের সঙ্গে দেখা হয় জমিদারবাড়িতে। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের খোঁজে সারা দেশে ঘুরে বেড়াই। মকিমপুর জমিদারবাড়িতে এসে পুরোনো দিনের নকশার বাড়ি ও মন্দিরটি দেখে খুব ভালো লাগল।’ জমিদার ভবনের করুণ দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা দরকার।

একই আহ্বান রায়গঞ্জ: ইতিহাস সমাজ ও সংস্কৃতি বইয়ের লেখক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক খ ম রেজাউল করিমেরও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগের দিনের নির্মাণশৈলী খুবই সুন্দর ছিল। জমিদারবাড়ি ও মন্দিরটি নির্মাণে স্থাপত্যশিল্পের চমৎকার ব্যবহার লক্ষণীয়। কালের বিবর্তনে এ বাড়িটি ধ্বংসের পথে কিন্তু এটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন মকিমপুর জমিদারবাড়িটি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।