অভিযোগ টিআইবির

গোপনীয়তার আশ্রয় ও তড়িঘড়ি করে ব‍্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, ব‍্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশে দুর্বলতা ও ঝুঁকি রয়েছে এবং অংশীজনের পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে। অধ্যাদেশ অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকার গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে এবং তড়িঘড়ি করেছে।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ ও ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ শনিবার এক বিবৃতি টিআইবি এর সমালোচনা করে অধ্যাদেশ দুটি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে অংশীজনদের সঙ্গে টানাপোড়েন চলমান অবস্থায় সরকার পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এসে সক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে এবং বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তবে খসড়ায় অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা ও ঝুঁকি বিষয়ে অংশীজনের পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার একতরফাভাবে সর্বশেষ খসড়া সম্পর্কে অংশীজনদের অবহিত না করে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন করেছে, যা নিন্দনীয়। অনুমোদিত খসড়ায় বিশ্বজুড়ে অনুসৃত উপাত্ত সুরক্ষা মূলনীতি—ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা, সততা ও গোপনীয়তা এবং জবাবিদিহির বিষয়গুলো বাদ দিয়েছে। আইনটিকে প্রণয়নের গোড়াতেই প্রাণহীন ও খোঁড়া করে দেওয়ার অভাবনীয় নজির তৈরি করা হলো।

খসড়ার সূত্র ধরে টিআইবি বলছে, উপাত্ত-জিম্মাদার ও প্রক্রিয়াকারীকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে ছাড়ের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। যেটাকে শুভংকরের ফাঁকি বললেও কম বলা চলে। আবার অপরাধ প্রতিরোধের নামে ব্যক্তিগত উপাত্তে যে ঢালাও প্রবেশাধিকারের সুযোগ রাখা হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কী বিবেচনায়, কোন উদ্দেশ্যে উপাত্তের সুরক্ষার নামে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার বিধানাবলি অধ্যাদেশটিতে বলবৎ রাখা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা জরুরি। জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের স্বার্থরক্ষার নামে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার এখতিয়ারও বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে।’

টিআইবি বলেছে, বর্তমান ডিজিটাল–নির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় এ ধরনের আইনের উদ্যোগ গ্রহণ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাপকতা ও সমস্যা চিহ্নিত না করে, সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের এই প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই অন্তর্ভুক্ত না করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জটিলতা বাড়বে। পাশাপাশি বহুমাত্রিক অধিকারহরণ, ব‍্যক্তিগত ও ব‍্যবসায়িক তথ্যের ওপর সরকারি নজরদারির ঝুঁকি বাড়বে।

অধ্যাদেশ দুটি কার্যকর করা থেকে বিরত থেকে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে তাঁদের মতামত গ্রহণের প্রক্রিয়া সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।