চট্টগ্রাম বন্দরে সেবার মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। এখন গেজেট জারির অপেক্ষা। সরকারের ভাষ্য হচ্ছে মাশুল বাড়ানো হলেও তা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এখনো কম। অপর দিকে ব্যবহারকারীরা বলছেন, তাঁদের প্রস্তাবের চেয়ে কয়েক গুণ মাশুল বাড়ানো হচ্ছে, যা ব্যবসার খরচ বাড়াবে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আজ শুক্রবার সকালে বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে বলেন, মন্ত্রণালয় এককভাবে মাশুল বাড়ায়নি। আন্তমন্ত্রণালয় আলোচনা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বন্দরের মাশুল বাড়ানো হয়েছে। মাশুল বাড়ানোর পরও বিশ্বের অনেক বন্দরের চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল এখনো অনেক কম।
মাশুল কত শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে, সে প্রশ্নের জবাব দেননি নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তবে বন্দর কর্মকর্তারা বলেছেন, মাশুল বাড়ানোর হার গড়ে ৪০ শতাংশের কম–বেশি হতে পারে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ ও পণ্য খাতে সেবার জন্য মাশুল আদায় করে। একেক খাতে মাশুলের হার একেক রকম। এই মাশুল দেয় দেশি–বিদেশি জাহাজ মালিক, কনটেইনার পরিচালনাকারী ও আমদানিকারকেরা।
এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ যেসব মাশুল আদায় করছে, তার বড় অংশই ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পাঁচটি খাতে মাশুলের হার বাড়ানো হয়। এরপর ২০১২ সালে আরও এক দফা মাশুল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর করা হয়নি।
নতুন করে যে মাশুল বাড়ানো হচ্ছে, তার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। স্পেনের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাশুল হালনাগাদ করে বন্দরের কাছে প্রস্তাব দেয়। এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি গেজেট নোটিফিকেশন জারি করার জন্য বন্দর থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়।
ব্যবহারকারীরা বলছেন, গত ২ জুন মাশুল নিয়ে আলোচনার পর তাঁরা ৩০ জুনের মধ্যে মাশুল কত বাড়ানো যেতে পারে, তা নিয়ে প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। তাতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে মাশুল বাড়ানোর পক্ষে মত দেয় ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ব্যবহারকারীদের নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই মাশুল বাড়ানো হচ্ছে।
বন্দরে বর্তমানে ট্যারিফ লাইনে ৫২টি খাত রয়েছে। জটিলতা কমাতে তা ২৩টি খাতে আনা হয়েছে। পাঁচটি নতুন খাত যুক্ত করা হয়েছে। ব্যবহার না থাকায় চারটি খাত বাদ দেওয়া হয়েছে।
জাহাজ, কনটেইনার ও সাধারণ পণ্য খাতে বন্দরের অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার বাবদ সেবার বিনিময়ে মাশুল আদায় করে বন্দর। বন্দরের সবচেয়ে বহুল পরিচিত মাশুল আদায়ের একটি খাত হলো জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানো। এই খাতে প্রতি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারের মাশুল হচ্ছে ৪৩ ডলার ৪০ সেন্ট। এই মাশুল বাড়িয়ে ৭০ ডলার ১১ সেন্ট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আরেকটি খাত হলো বন্দর চত্বরে কনটেইনার রাখার মাশুল। জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর চার দিন পর এই মাশুল আদায় হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহের জন্য প্রতিদিনের মাশুল প্রতি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারের জন্য ৬ ডলার। এটি বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৯০ ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফাইয়্যাজ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে মাশুল বাড়ানোর প্রস্তুাব দিয়েছিলাম। এখন শুনেছি, এর চেয়ে অনেক বেশি বাড়ানো হচ্ছে। একলাফে এত বেশি হারে মাশুল বাড়ানো হলে তাতে ব্যবসার খরচ হঠাৎ করেই বাড়বে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, শিপিং এজেন্ট থেকে ১০ শতাংশের কম–বেশি বাড়ানোর দাবি ছিল। এ নিয়ে আরেকটা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ, মাশুল বাড়লে তা দিন শেষে ভোক্তার কাছ থেকেই আদায় হবে। ভোক্তার কাঁধে পড়বে বাড়তি খরচের বোঝা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি খায়রুল আলম বলেন, বন্দর ডলার হিসেবে মাশুল আদায় করে। অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে ডলারের দর ছিল ৩০ টাকা ৪১ পয়সা। এখন ডলারের দর ১২২ টাকা। অর্থাৎ মাশুল না বাড়ালেও ডলারের দর বাড়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাশুল চার গুণের বেশি বেড়েছে। এ অবস্থায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্দরের মাশুলের হার বাড়ানোর দরকার ছিল না। কারণ, বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান।