
চলনবিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে বিলে! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাঁরা লেখাপড়া করেন, তাঁরা কেমন করে এ দাবি তুলতে পারেন, এ দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে পারেন বা প্রস্তাব পাঠাতে পারেন?’
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার অনুমতি দিল কি দিল না, সেটা পরে, আপনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রকল্প আদৌ পাঠাতে পারেন কি না, এটাই তো হলো সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিজওয়ানা হাসান এ কথাগুলো বলেন। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন যৌথভাবে ‘মার্ক অ্যাঞ্জেলো রিভার অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রসঙ্গত, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের দাবিতে সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
সিলেটে সাদাপাথরে যে তাণ্ডবটা হয়েছে, তা কিন্তু বহু বছর ধরে হচ্ছে। ফেসবুক পড়ে মনে হইল এই তাণ্ডব ২০২৫ সালে হয়েছে; তা কিন্তু নয়। এই তাণ্ডব শুরু হয়েছে ২০০৬ সাল থেকেসৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ উপদেষ্টা
তবে পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, প্রকল্প এলাকাটি চলনবিলের শেষ অংশে অবস্থিত। এখানে মিলিত হয়েছে শতাধিক খাল, বিল, বড়াল নদসহ অর্ধশতাধিক নদীর পানি। এসব উৎস থেকে আসা পানির সম্মিলিত প্রবাহ গিয়ে মিলিত হয় যমুনা নদীর সঙ্গে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘চলনবিল নিয়ে কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেছে। সেই প্রকল্পে ভাষা ভাষা কোনো কথা আমরা রাখতে দেই নাই। সেখানে আমরা বলেছি, পানি উন্নয়ন বোর্ড যে স্থাপনাগুলো চলনবিলে পানি প্রবাহের বাধা সৃষ্টি করতেছে, সেই স্থাপনাগুলোর তালিকা করে আমাকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেবে। যাতে আমি থাকতে থাকতে ক্ষতিকর স্থাপনাগুলোর একটা বিকল্প করে দিয়ে যেতে পারি।’
রিজওয়ানা হাসান জানান, গাজীপুরের বেলাই বিল, মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিলের বিল হিসেবে রেকর্ড করা নেই। সরকার এ দুটি বিলসহ চলনবিলের ম্যাপিংয়ের কাজ করছে। তিনি জানান, সরকার নদী, হাওর, খাল–বিল নিয়ে কাজ করছে। সরকার যখন কাজ শুরু করেছিল, তখন মেয়াদ সম্পর্কে নিশ্চিত করে জানত না। তাই কাজ কতটা করা যাবে বা যাবে না, তা নিশ্চিত ছিল না। এখন নিশ্চিত করে জানে, মেয়াদ দেড় বছর। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার চেষ্টা করছে।
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সেখানকার স্থানীয় মানুষ হোটেলগুলোর মালিক নন। আন্দোলন যাঁরা করেন, তাঁদের বেশির ভাগই হচ্ছে বাইরের ব্যবসায়ী। সেন্ট মার্টিন এই ব্যবসায়ীদের নয়, সেন্ট মার্টিন সবার।
‘খালের মধ্যে ডায়াবেটিক হাসপাতাল’
ইতিমধ্যে নদীর একটি তালিকা সরকার করেছে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এ সরকার কিছু দৃষ্টান্ত তৈরি করে দিতে পারবে, কিন্তু সব পারবে না। ঢাকার পাঁচটি নদী নিয়েও সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সারা দেশে কতগুলো খাল রয়েছে, তা জানার জন্য জেলা থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ২৯টি জেলা তালিকা দিয়েছে। জেলাগুলোর তালিকায় দেখা যায়, খাল হয়তো রেকর্ড আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। দেখা যাচ্ছে, খালের মধ্যে ডায়াবেটিক হাসপাতাল দাঁড়িয়ে আছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘সিলেটে সাদাপাথরে যে তাণ্ডবটা হয়েছে, তা কিন্তু বহু বছর ধরে হচ্ছে। ফেসবুক পড়ে মনে হইল এই তাণ্ডব ২০২৫ সালে হয়েছে; তা কিন্তু নয়। এই তাণ্ডব শুরু হয়েছে ২০০৬ সাল থেকে। আমার করা প্রথম মামলাতে আমি প্রথম রায় পেয়েছি ২০০৬ সালে। এখন দেখেন জনগণের শক্তি কতটা শক্তিশালী। যখন সব মানুষ এটার প্রতিবাদ শুরু করল, তখন কিন্তু প্রশাসনও বাধ্য হলো এটাকে থামাতে।’
সেন্ট মার্টিনে হোটেলের মালিক স্থানীয় লোকজন নন
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সেখানকার স্থানীয় মানুষ হোটেলগুলোর মালিক নন। আন্দোলন যাঁরা করেন, তাঁদের বেশির ভাগই হচ্ছে বাইরের ব্যবসায়ী। সেন্ট মার্টিন এই ব্যবসায়ীদের নয়, সেন্ট মার্টিন সবার।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সেন্ট মার্টিনকে বাঁচাতে পারলে পর্যটন চলবে। সেন্ট মার্টিনে কখনোই ভ্রমণ বন্ধ করা হয়নি, পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এটা বৈশ্বিক অনুশীলন। আর সেন্ট মার্টিনে রাত্রী না যাপনের সিদ্ধান্ত ২০১৬ সালে হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ সরকার এসে তা বাস্তবায়ন করছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কয়েকজন জাহাজ ব্যবসায়ী আর হোটেল ব্যবসায়ী কাছে আমাদের সবার সেন্ট মার্টিন কি তুলে দেব?’
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, বাংলাদেশের নদী আন্দোলনকে ভারত পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এখানকার পরিবেশ আন্দোলনগুলোর ধরন খেয়াল করলে দেখা যায়, একধরনের ‘সফট ইন্ডিয়ান ব্যাখ্যার’ প্রভাব রয়েছে।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, তিস্তা নিয়ে কথা বললে, পুরো পানির হিস্য কতটুকু পাওয়া যাবে বা তিস্তা চুক্তি নিয়ে কথা কম বলা হয়। বরং চীনের বিনিয়োগ নিয়ে কথা হয়। চীনের বিনিয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা গেলে ভারতের লাভ।
অনুষ্ঠানে তিন বিভাগে ‘মার্ক অ্যাঞ্জেলো রিভার অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। গবেষণা বিভাগে হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া, সাংবাদিকতা বিভাগে দৈনিক সমকালের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহিদুর রহমান এবং সংগঠন বিভাগে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবার পুরস্কার পেয়েছে।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইমপ্রেস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন প্রমুখ।