মোহাম্মদ আবদুল মোমেন
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন

৭ দিনের মধ্যে সম্পদের হিসাব দেবেন দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা

আগামী ৭ দিনের মধ্যে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়–ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের আয় ও সম্পদের হিসাব প্রকাশের টিআইবির আহ্বান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবদুল মোমেন এ কথা কথা বলেন।

নিজের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুল মোমেন বলেন, যেসব অভিযোগ আছে, সেগুলো দুদকে এসেছিল ২০০৯ সালে। ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এগুলো নিয়ে বহু তদন্ত হয়েছে। ২০২৩ সালে ওই সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে প্রত্যয়ন দিয়েছে দুদক। এটা কিন্তু ৫ আগস্টের পরে নয়, আরও অনেক আগে।

আজ বেলা তিনটার পর আবদুল মোমেন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন নতুন দুদক কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। তবে আরেক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্‌সান ফরিদ আজ যোগ দেননি।

দুদকের সপ্তম চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার হিসেবে মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী আজ বুধবার যোগ দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষাসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে চেয়ারম্যান এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্‌সান ফরিদকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

দুদকের নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব। দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করতে পারব, সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঠিক হবে না। আমরা যেন সাধ্যমতো কাজ করতে পারি, সেটা দেখতে হবে। ন্যায়নিষ্ঠভাবে আমরা আইন মেনে কাজ করব।’

নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাববে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি তিনটি রাজনৈতিক সরকার ও দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো এই অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নেই। রাজনৈতিক চাওয়া নেই। এই সরকারের চাওয়া হচ্ছে জনগণকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এখানে রাজনৈতিক সরকার প্রভাবিত করবে না। আমরাও প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব।’

দুদকের হয়রানি, মামলাজট কমাতে পারবেন কি না জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের কাজ শুরু করতে দিন। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করব হয়রানি কমাতে পেরেছি কি না, তদন্তে গতি আনতে পেরেছি কি না, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহয়তা করতে পেরেছি কি না।’

৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশ ও আগের বাংলাদেশের প্রত্যাশা একরকম নয় উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, যে আন্দোলন থেকে নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেটি ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বৈষম্যের সূচনা মূলত দুর্নীতি থেকে। দুর্নীতি কমাতে পারলে বৈষম্যও কমে যাবে।

দুদকের নতুন প্রধান বলেন, নতুন কমিশন জনপ্রত্যাশা পূরণ করবে। যেসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাঁরা এসব কাজ করেছেন, তাঁরা যেন শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান, সেটা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। কোনো অসমাপ্ত ও পক্ষপাতমূলক তদন্ত, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে যেন কাজ করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। এ সময়ে জনপ্রত্যাশা, রাষ্ট্রের যে প্রত্যাশা, সেটা খানিকটা হলেও পূরণ করা হবে।

দুদক নিয়ে বাজারে অনেক কথা আছে জানিয়ে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘দুদক এ সমাজেরই একটা অংশ। সমাজ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে দুদকও খানিকটা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুদক কর্মকর্তাদের যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা ন্যায়নিষ্ঠভাবে আপনারা (সাংবাদিক) দেখবেন।’

দুদক কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত যদি ঠিকমতো করে দিতে পারি, তবেই বিচারকেরা ন্যায়বিচার দিতে পারবেন। এখানে বিচারককে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। বিচারকের একক কৃতিত্ব নেই। বিচারের পেছনে তদন্ত হচ্ছে ফাউন্ডেশন। তদন্ত নিরেপক্ষ হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।’