
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের চার শিক্ষার্থী পেলেন এক লাখ টাকা ও নিজেদের উদ্ভাবনী আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার অনন্য সুযোগ। ‘ফাস্টফ্লোআপ’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম আইডিয়ানির্ভর ইনোভেশন প্রতিযোগিতা ‘ফ্লোট্যাঙ্ক ২০২৫’ গ্র্যান্ড ফিনালেতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁদের দল ‘ফিনিশ দ্য জুস’।
গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল শেরাটনে আয়োজিত গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছিলেন নতুন প্রজন্মের চিন্তাশীল ও শিল্পখাতের অভিজ্ঞরা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন ফাস্টফ্লোআপের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং মাইশা আনিকা। আয়োজনের শুরুতেই বিচারক প্যানেলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ‘প্রযুক্তির প্রভাব: ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং’ শীর্ষক আলোচনা।
উদ্ভাবন থেকে বাস্তবায়ন
অনুষ্ঠানে ফাস্টফ্লোআপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিদম শাহরিয়ার প্রতিষ্ঠানটির নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে ঘোষণা দেন। ‘সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইফসাইকেল (এসডিএলসি)’ শীর্ষক এই প্রোগ্রামের অংশ হিসেবেই ফ্লোট্যাঙ্ক বিজয়ী দলের আইডিয়া বাস্তবে রূপ নেবে। যেখানে বিজয়ী দল থাকবে ক্লায়েন্ট হিসেবে আর প্রকল্পে কাজ করবেন এসডিএলসির ইঞ্জিনিয়াররা।
রিদম শাহরিয়ার বলেন, ‘ফ্লোট্যাঙ্ক কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে ভবিষ্যতের উদ্ভাবকেরা বাস্তব সমস্যার সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসতে পারবে।’
প্রতিযোগিতার ধাপ
ফ্লোট্যাঙ্কের জন্য অনলাইনে তৈরি হয়েছিল একটি বিশেষ ওয়ান-স্টপ পোর্টাল। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বুয়েট, বিইউপি ও ডিইউসহ দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০০টির বেশি রেজিস্ট্রেশন জমা পড়ে। প্রতিটি দলকে একটি বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদের প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে প্রেজেন্টেশন ও ভিডিও জমা দিতে হয়। স্ক্রিনিং শেষে বাছাই করা হয় শীর্ষ পাঁচ দলকে, যারা আমন্ত্রণ পায় গ্র্যান্ড ফিনালের মঞ্চে।
ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচটি দল হলো—টিম ক্ষুদ্রঋণ (তাসনিম খানম তানহা, মুবাশ্বিরা হোসাইন, তাসফিন রহমান খান, আহনাফ বিন আশরাফ আরাফ); ‘ফিনিশ দ্য জুস’ (মাহমুদুর রহমান, রাইয়ান তাসরিফ, আবদুল মোতালেব, মো. আসিফ খান); দ্য পাওয়ারপাফ গার্লস (আহাম্মেদ শৌকি, স্বয়ম সৌকর্য, মোহাম্মদ আশফাকুল হাসান, মুমতাহিনা অ্যাম্ব্রিন); টিম অগ্রণী (সুলতানা আক্তার রুপা, মো. সিরাতুল ইসলাম, সোহানুর রহমান সোহান, মো. সাজ্জাদ-বিন-কাশেম) এবং ২৪ইঞ্জিনিয়ার্স (আনাস ওয়াসিক, মো. রাজায়া রাব্বি আদর, হামজা বিন আরিফ, রাহবার-ই-তৌসিফ)।
মূল্যায়ন ও বিজয়
চূড়ান্ত পর্বে বিচারকেরা অংশগ্রহণকারীদের উপস্থাপনা, সৃজনশীলতা, বাস্তবায়নযোগ্যতা, বড় পরিসরে বিস্তারের সম্ভাবনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক প্রভাবের ওপর স্কোরকার্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেন।
সেখানে সেরা হিসেবে নির্বাচত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘ফিনিশ দ্য জুস’। তাদের উদ্ভাবনী সমাধান বিচারকদের মুগ্ধ করে। মঞ্চে বিচারক ও ফাস্টফ্লোআপ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লাখ টাকার চেক ও চুক্তিপত্র, যেখানে তাদের আইডিয়া বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বিচারক প্যানেল
ফ্লোট্যাঙ্ক ২০২৫-এর গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারক হিসেবে ছিলেন ফাস্টফ্লোআপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিদম শাহরিয়ার, গ্রে ঢাকার এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর নুরুর রহমান, ইউনিলিভার বাংলাদেশের কনজ্যুমার এনগেইজমেন্ট সেন্টার লিড ঊর্মি নূর বিনতে গিয়াস, অ্যাডকমের হেড অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড প্ল্যানিং রাশিকা ওসমান এবং অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ফাস্টফ্লোআপের কনসালট্যান্ট রিবাত উজ জামান।
শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি মিশন
ফাস্টফ্লোআপ জানিয়েছে, ফ্লোট্যাঙ্ক কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়; বরং তাদের দেশব্যাপী প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট মিশনের অংশ। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির ‘জব রেডি প্রোগ্রাম’-এ তরুণরা পেয়েছে রিয়েল স্কিল, পেইড ট্রেনিং ও সার্টিফিকেশন। ফ্লোট্যাঙ্ক সেই ধারাবাহিকতারই একটি নতুন দিগন্ত।
‘ফ্লোট্যাঙ্ক’ প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যতের উদ্ভাবন ও নেতৃত্বে এগিয়ে আসবে। এই তরুণদের হাত ধরেই দেশ প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত ছোঁবে বলে মনে করে ‘ফাস্টফ্লোআপ’।